রাজধানীর মিরপুরের ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ ডা. আবুল কালাম বেপারীকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বদলি (ওএসডি) করায় বিক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা গত দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে তাদের একটাই দাবি ‘‘বেপারী স্যার ছিলেন আমাদের অভিভাবক, তাকে আমরা আবারো এ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে চাই।’’
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ডা. আবুল কালাম বেপারীকে পুনরায় অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করার আদেশ না আসা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সমস্যাটা আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, ক্যাম্পাসে যে পুলিশ মোতায়েন করা ছিল তাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আবুল কালামকে ওএসডি করা হয়। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
শিক্ষার্থীরা জানান, ডা. আবুল কালাম বিগত দেড় বছরে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে থেকে ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার মান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘তিনি প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এর আগের কোনো অধ্যক্ষ করে দেখাতে পারে নি। শিক্ষার্থী মহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও কলেজের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে কোনো স্বার্থন্বেষী মহল তাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ওএসডি করিয়েছে।’
জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছে। সোমবার তারা কলেজ ভবনের প্রত্যেকটি গেটে তালা দিয়ে দেয়। কিন্তু নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ পুলিশ ও বহিরাগতদের নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে আসে।
পরে পুলিশের সহযোগীতায় গেটের তালা ভেঙে কলেজে ঢুকে। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠে।
এ নিয়ে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা প্রজ্ঞাপনের আগ পর্যন্ত এখানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবো, আর চিকিৎসা কার্যক্রমে কোনো ব্যঘাত ঘটাচ্ছি না। হাসপাতাল ভবন আলাদা। সেটা চালু আছে।’
‘‘প্রকৃতপক্ষে প্রশাসন বা সরকারের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই আমাদের দাবি শুধুমাত্র বেপারী স্যারকে অধ্যক্ষ হিসেবে ফিরে পাওয়া।’’
আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, বেপারী স্যার অধ্যক্ষ হয়ে ফিরলে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেব। আন্দোলনে সর্বস্তরেরর শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে। এ সময় তারা প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষরিত নথিপত্র প্রদর্শন করে।
যেখানে কলেজের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর ছাড়াও উপস্থিতিও দেখা গেছে।
কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক হুমায়ুন কবির বলেন, আমি সবার কাছে সহযোগীতা চাইছি। আমাকে অধ্যক্ষের আসনের বসতে দেয়া হোক। তাহলে আমিও ভালো কাজ করে দেখাতে পারবো। কিন্তু তা তো হচ্ছে না। আর সরকারি নির্দেশনা তো একদিনে হবে না। সে জন্যেও সময় দিতে হবে।
সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (মেডিকেল শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুর রশিদ বলেন, আমাদের তো সরকারের আদেশের বাইরে যাওয়ার সম্ভব না। সমস্যাটা আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।
সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, ভাষানটেক ও কাফরুল থানা সহ মিরপুর জোনের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পরিস্থিতি জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ জানান, এই সমস্যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমাধানের আদেশ রয়েছে। আমরা উপস্থিত আছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে। তবে ক্যাম্পাসে যে পুলিশ মোতায়েন ছিল তা সরিয়ে নেয়া হয়েছে।