চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রিয় গুরুর ফোনে অবাক ‘কৌশিক’!

প্রিয় কৌশিকের ফর্মটা ভালো যাচ্ছে না। বিশ্বকাপের তিন ম্যাচে একটাও উইকেট নেই। চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে সমালোচনা। প্রিয় শিষ্যের এই সমালোচনাটা মানতে পারছেন না একজন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি। নাম্বারটা জোগাড় করে করলেন ফোন। ওপার থেকে ইথার তরঙ্গে সাহস ছড়িয়ে বললেন, ‘দুশ্চিন্তা করো না। শুধু নিজের সেরাটুকু দিয়ে যাও। সব ঠিক হয়ে যাবে!’

১৮ বছর আগে, ২০০১ সালে যার জোর প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব সেই ক্যারিবীয় কিংবদন্তি অ্যান্ডি রবার্টসের এমন এক ফোনে অবাক হয়ে যান মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। প্রিয় গুরুর বার্তায় নিজের আনন্দঘন এক অনুভূতির কথা ক্রিকইনফোকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।

বিশ্বকাপ দেখতে ইংল্যান্ডে এসেছিলেন ৫৬টি টেস্ট ও ৪৭টি ওয়ানডে খেলা অ্যান্ডি রবার্টস। স্বদেশ উইন্ডিজের খেলা দেখাই ছিল উদ্দেশ্য। এসে জানলেন মাশরাফীর দিনকাল খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তাই স্বদেশি ও বাংলাদেশের বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের থেকে নাম্বার নিয়ে ফোন দেন প্রিয় কৌশিককে।

‘ওয়ালশ জানে রবার্টসের সঙ্গে আমার কথা হয়। কথা হয় আবার গ্যাপও থাকে। মাঝে মাঝে কথা হয়। আমার নাম্বার আবার নতুন করে নিয়েছে ওয়ালশের থেকে, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বলেছে সবকিছু ঠিকই আছে। একটা সময় আসে এরকম। বলেছে, যা কিছু করি যেন মন থেকে করি। সেরাটা দেয়ার যেন চেষ্টা করি।’

এখনো যে মনে আছে রবার্টসের তাতেই অবাক মাশরাফী, ‘অবশ্যই অবাক হয়েছি। কারণ এখন তো ওনার বয়স হয়েছে। এখনো আমার খোঁজখবর রাখে। আমাকে এখনো কৌশিক (মাশরাফীর ডাক নাম) নামেই ডাকে।’

২০০১ সালে দুই সপ্তাহের ট্রেনিংয়ে বিকেএসএপিতে এসেছিলেন রবার্টস। সেখানেই মাশরাফীর সঙ্গে পরিচয়। দেখেই ১৭ বছর বয়সী মাশরাফীর বোলিংয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যান ক্যারিবীয় কিংবদন্তি। মূলত তার প্রচেষ্টাতেই সে বছরের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় ম্যাশের।

১৮ বছর আগে রবার্টসকে দেখার সেই অনুভূতি এখনো চোখে ভাসে মাশরাফীর। একজন কিংবদন্তির কাছ থেকে একসঙ্গে একঝাঁক তরুণ পেসারের শেখার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন মাশরাফী, ‘উনাকে প্রথম দেখার অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। আমি ছিলাম, তালহা জুবায়ের, আনোয়ার হোসেন মনির, মাহবুবুল আলম রবিন, শাফাক আল জাবির, সৈয়দ রাসেল, তারেক আজিজ, আলমগীর কবির- আমরা সবাই ছিলাম। শেখার থেকে খালি ওনার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।’

‘ওনার বোলিং তো দেখার সৌভাগ্য হয়নি, রেকর্ড সম্পর্কে শুনেছি। তখন তো ইউটিউবের ব্যবহার খুব একটা বাংলাদেশে ছিল না। এরপর ইউটিউব আসার পর ওনাকে আস্তে আস্তে জানা। শুধু আমার জন্যই নয়, আমার মনে হয় যারা ওনার ক্লাসে ছিল, সবার জন্যই অসাধারণ ছিল মুহূর্তটা।’

ক্যারিয়ারের একদম ঊষালগ্নে প্রিয় কৌশিককে উপদেশ দিয়েছিলেন রবার্টস, ‘যা করো মন দিয়ে করো। নিজের সেরাটা দিয়ে করো।’ প্রিয় গুরুর সেই উপদেশ এখনো আপ্তবাক্যের মতো মেনে চলেন কৌশিক।

‘যারা ক্রিকেটকে একদম গভীরভাবে অনুসরণ করে তারা ছাড়া হয়তো অ্যান্ডি রবার্টসের রেকর্ড, অ্যান্ডি রবার্টসকেই জানে না। আমরা তো ক্রিকেট খেলি, সুতরাং আমরা জানি অ্যান্ডি রবার্টস কী ছিল। আমার জন্য এ অনেক বড় পাওয়া যে ওনার মতো এত বড় একজন ক্রিকেটার শুধু আমাকে শিখিয়েই শেষ করেনি, আমার খোঁজখবর রাখে। প্রতিনিয়ত ফলো করছে। অবশ্যই আমার নিজের জন্যও অনেক বড় অর্জন।’