কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৫টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন সাবেক বিশ্বসুন্দরী এবং বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। গত সোমবার ইউনিসেফের হয়ে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বাংলাদেশে এসেছেন। প্রকৃতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করে চলেছেন এ বলিউড অভিনেত্রী।
গত বছরের ২৫ আগস্টের পরে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার পর থেকেই ইস্যুটি সারাবিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম বড় এই ঘটনা নিয়ে সোচ্চার বিভিন্ন মহল। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ ও নানা কূটনীতিক তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় ও সার্বিক সহায়তা করছে বাংলাদেশ। একটি দেশের জন্য বড় চাপ হলেও বাংলাদেশ সে দায়িত্ব সূচারুভাবে পালন করছে। সীমিত সম্পদ ও অবস্থার বিবেচনায় জাতিসংঘসহ বিশ্বের ছোট-বড় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।আগত রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু, তাছাড়া বাংলাদেশে আসার পর জন্ম নিয়েছে অনেক রোহিঙ্গা শিশু।
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক বিষয়গুলোর চাহিদা বিবেচনায় এসব রোহিঙ্গা শিশু বেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে আসার পর থেকেই রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ইউনিসেফ। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মতো তারাও অ্যাডভোকেসি থেকে শুরু করে তহবিল সংগ্রহে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে বিশিষ্টজনরা ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ইস্যু ও প্রয়োজনে তারা বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য চাওয়াসহ কোনো বিশেষ বিষয় নজরে আনতে সাহায্য করে থাকেন। কোনো ইস্যুতে কোনো অঞ্চলে ইউনিসেফের হয়ে তাদের দূতরা সফর করলে বিশ্বমিডিয়া তা প্রচার করে থাকে। প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সফরের মাধ্যমে তেমনিভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সারাবিশ্বের বিনোদনপ্রিয় ও তরুণদের নজরে আসবে। বলিউডের গণ্ডি পেরিয়ে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া এখন হলিউডের নামকরা সেলিব্রেটি, সম্প্রতি ইংল্যান্ড রাজপরিবারের বিয়েতেও তিনি অামন্ত্রিত হয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সার্বিক বিচারে তাই প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার এই সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সাবেক বিশ্বসুন্দরী এবং বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেছেন: ‘ফেলে আসা দু:সহ স্মৃতি রোহিঙ্গা শিশুদের বাকি জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা সবসময় দুর্বল থাকবে। অনেক রোহিঙ্গা শিশু ভয় নিয়েই বেড়ে উঠবে। এদের ভবিষ্যত বিনির্মাণে সবার সহযোগিতা দরকার। আমাদের সবার সহযোগিতায় বদলে যেতে পারে রোহিঙ্গা শিশুদের জীবন। আসুন, হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবাই একসাথে তাদের জীবন পাল্টে দিতে কাজ করি।’
এই বার্তাকে কাজে লাগিয়ে ইউনিসেফ হয়তো তহবিল সংগ্রহ করবে রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের কল্যাণে, যা বাংলাদেশের উপর থেকে কিছুটা চাপ কমাতে সাহায্য করবে এবং বিশ্বের তরুণসমাজ যারা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ভক্ত, তারাও রোহিঙ্গাদের মানবেতর এই সমস্যার বিষয়ে জানবে এবং সোচ্চার হবে বলে আমাদের ধারণা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরুর আগে পর্যন্ত শরণার্থীদের জীবন সহজ হোক, এই আমাদের প্রত্যাশা। তবে, তাদের প্রত্যাবাসনই আসল সমাধান।