কিং এডওয়ার্ড-এইট সাম্রাজ্যের মায়া ত্যাগ করেছিলেন ভালোবাসার জন্য। রানী এলিজাবেথ এর অনিন্দ্য সুন্দরী বোন মার্গারেটও প্রেমিককে ছেড়েছিলেন রাজতন্ত্রের চাপে। কিন্তু প্রিন্স হ্যারির ক্ষেত্রে বিষয়টি এতটা জটিল হয়নি। প্রেমের সফল পরিণতি পেয়েছেন তিনি। একজন ডিভোর্সিকে বিয়ে করতে রাজকীয় কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি, অন্ততঃ প্রকাশ্যে না।
ট্রেভর এঞ্জেলসনের সঙ্গে বিয়ের ১৮ মাসের মাথায় বিচ্ছেদ হয়েছিল মেগান মার্কেলের। সোমবার যখন ঘোষণা আসে যে ডিভোর্সি প্রেমিকা মেগান মার্কেলকে বিয়ে করছেন হ্যারি আর এই বিয়েতে সম্মতি আছে হ্যারির দাদী রানী এলিজাবেথের, তখন অনেকেই অবাক হয়েছেন। কারণ ব্রিটেনের সামাজিক নিয়ম কানুন সম্প্রতি সময়ে অনেক ঢিলেঢালা হলেও রাজ পরিবার এতদিন বেশি কঠোরভাবেই নিয়ম মেনে চলতো।
হ্যারির বিয়েতে রানীর সমর্থন জানানোর পরই আলোচনা শুরু হয়েছে যে রাজ পরিবারের নিয়ম, গত ৮০ বছরে অনেকটাই আধুনিক হয়েছে। না হলে একজন ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে হ্যারির বিয়ে দিতে কিছুতেই রাজি হওয়ার কথা না রানীর।
১৯৩৬ সালে কিং এডওয়ার্ড দুইবার ডিভোর্স হওয়া ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করে সাংবিধানিক জটিলতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। ব্রিটিশ সরকার এবং ইংল্যান্ডের চার্চ থেকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে। ভালোবাসার জন্য তিনি ক্ষমতার মায়া ত্যাগ করেন এবং ফ্রান্সে বসবাস শুরু করেন। এর ফলে রানী এলিজাবেথ এর বাবা জর্জ সিক্স অপ্রত্যাশিত ভাবে রাজা হিসেবে ঘোষিত হন।
সিংহাসন ত্যাগ করার সময় এডওয়ার্ড বলেছিলেন, ‘বিশ্বাস করুন, এই বোঝা এবং রাজার দায়িত্ব আর নিতে পারছি না। যাকে ভালোবাসি তার সাহায্য এবং সমর্থনই আমার জন্য যথেষ্ট।’
এর দুই দশক পরে ১৯৫৫ সালে রানী এলিজাবেথ এর ছোট বোন মারগারেট প্রেমে জড়ান এক হ্যান্ডসাম এয়ারফোর্স অফিসারের সঙ্গে। কিন্তু পারিবারিক প্রথার চাপে সেই সম্পর্কের মায়া ত্যাগ করতে হয়েছিল মারগারেটকে। আর তার কারণ ছিল এয়ারফোর্স অফিসার পিটারের আগের স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়েছিল।
বর্তমান যুগে ডিভোর্স খুবই সাধারণ ব্যাপার হলেও ডিভোর্স এর স্বীকার নারী কিংবা পুরুষের সঙ্গে রাজ পরিবারের কারও বিয়ে হওয়ার বিষয়টিকে সহজ ভাবে নেয়া হয় না। যদিও এলিজাবেথ এর চার সন্তানের মধ্যে তিনজনের বিয়ের পরিণতিই ডিভোর্সে গড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রিন্স চার্লস এর সঙ্গে ডায়ানার বিচ্ছেদ সবচাইতে আলোচিত। রূপকথার মতো বিয়ে এবং ১৫ বছর সংসারের পরে ১৯৯৬ সালে তাদের দাম্পত্য বিচ্ছেদে পরিণতি পায়। এর ঠিক এক বছর পরই গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ডায়ানার। এরপর ২০০৫ সালে চার্লস বিয়ে করেন ক্যামেলিয়া পার্কারকে। ক্যামেলিয়াও ছিলেন ডিভোর্সি। অবশ্য চার্লস এবং ক্যামেলিয়া চার্চে বিয়ে করতে পারেননি। কট্টর ধর্মীয় বিশ্বাসী রানী এলিজাবেথ চার্চের সুপ্রিম গভর্নরের ভূমিকা দায়িত্বের সাথে পালন করেছেন এবং সিভিল সিরিমনিতে অংশ নেননি।
তবে সবকিছু অনেকটাই বদলেছে এখন। তিন বছর আগে ইংল্যান্ডের চার্চ থেকে বলা হয়েছে, আগের স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় ডিভোর্স নেয়া ব্যক্তি পুনরায় চার্চে বিয়ে করতে পারবেন। তবে সেটা অবশ্যই বিশেষ অনুমতি নেয়া সাপেক্ষে।
৩৩ বছর বয়সী হ্যারি ৩৬ বছর বয়সী মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেলকে বধূ করতে যাচ্ছেন। মাত্র ১৬ মাসের সম্পর্কের পর হ্যারি এবং মেগানের বিয়েতে এত সহজেই রানীর সমর্থন পাওয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। প্রিন্স চার্লস এবং ক্যামেলিয়ার বিয়ের কারণে হ্যারির পথ অনেকটাই সহজ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এনডিটিভি