করোনার পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতিতে জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বা জেকেজি হেলথ কেয়ার প্রায় দুই হাজার করোনা রিপোর্ট গরমিল করেছে। নামে মাত্র নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে না পাঠিয়ে এ মনগড়া রিপোর্ট তারা দিয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে তদন্ত তাদের প্রায় শেষ পর্যায়ে তাই দ্রুত সময়ে দুই-একদিনের মধ্যে এই মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডের মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তে দেখা যায় জেকেজি ১৩ হাজার ৫৮৫টি নমুনা সংগ্রহ করেছিল। এরমধ্যে ১১ হাজার ৬৬০টি জেকেজি হেলথ কেয়ার মাধ্যমে করা হয়েছে। বাকি ১ হাজার ৯২৫টি নমুনা তারা ল্যাবে পাঠয়নি, এমনকি সঠিকভাবে নমুনা সংগ্রহও করেনি। গ্রাহকের নমুনা সংগ্রহের ফর্মে দেওয়া ই-মেইল ঠিকানায় তারা একটি ফেইক ইমেইল সার্ভার ব্যবহার করে সেগুলো পাঠিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও এমনও হয়েছে যে তারা নমুনা সংগ্রহ করেছে কিন্তু টেস্টের জন্য ল্যাবে না পাঠিয়ে নিজেরাই মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছে।’
আব্দুল বাতেন বলেন, ‘জেকেজি যেসব কম্পিউটার ও মেশিনারিজ ব্যবহার করে এসব ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করত সেগুলো আমরা সিআইডির ফরেনসিক এক্সপার্ট দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছি। যার ফলাফল আমাদের কাছে আছে এবং ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও যাবতীয় যে প্রাসঙ্গিক বিষয় রয়েছে সেগুলো আমরা সংগ্রহ করেছি। আমদের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে তাই দ্রুত সময়ে দুই-একদিনের মধ্যে এই মামলার চার্জশিট আমরা দাখিল করব।’
এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘জেকেজি একটি অনুমোদনহীন কোম্পানি, এটা তাদের ব্যবসায়িক কোনো রেজিস্ট্রার প্রতিষ্ঠান না। করোনা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের কাছ থেকে যে অনুমোদন তারা নিয়েছে; তখন থেকে দুই মাস পর তারা কাউন্সিলরের কাছ থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদনহীন তাই আরিফ চৌধুরী ও ডা. সাবরিনা নিজেদেরকে কখনো চেয়ারম্যান, কখনো আহবায়ক, কখনো বা উপদেষ্টা করেছেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘আমরা যে গরমিলের রিপোর্ট পেয়েছি তার সব ডকুমেন্ট আমরা স্বাস্থ্য বিভাগকে দিব। তারা তাদের বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী তাদের কর্মীদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবেন।’
গত ১২ জুলাই জেকেজি’র আহবায়ক ডা. সাবরিনা শারমীনকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও ডিসি অফিসে আনা হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এরআগে গত ২৩ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল চৌধুরীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আগের দিন আশকোনা থেকে হুমায়ুন কবীর ও তার স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত এপ্রিলে কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষার জন্য অনুমতি পায় জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা জেকেজি হেলথ কেয়ার। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা সংগ্রহ করার নামে তারা কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তৈরি করতেন ‘করোনার পজিটিভ-নেগেটিভ রিপোর্ট’।
জেকেজি বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পৃথক ছয়টি স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করত জেকেজি। শর্ত ছিল, সরকার নির্ধারিত ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠাতে হবে। জেকেজি হেলথ কেয়ার ওভাল গ্রুপের একটি অঙ্গসংগঠন।