আমিনুল ইসলাম মিঠু। তিনি মূলতঃ পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক। এই বিষয়ে কাজ করছেন অনেকদিন ধরে। কাজ করার সময় দেখেছেন দেশে প্রাণীদের সুরক্ষায় কারও নজর নেই। বরং প্রাণীদের প্রতি হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় বিভিন্ন সময়।
যেমন কুকুরের প্রতি মানুষের সহিংস মনোভাব বেশি। কিছুদিন আগে রামপুরায় ১৩টি বাচ্চাসহ দুই মা কুকুরকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়।
সাংবাদিক মিঠু চাইলেন প্রাণীর প্রতি মানুষের মনোভাব পাল্টাতে। প্রাণীর প্রতি মানুষ যেন সহানুভূতিশীল হয়, প্রাণীদের ভালোবাসে সেই চেষ্টা শুরু করেছেন তিনি। মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে গড়ে তুলেছেন একটি সংগঠন, ইকো-সেভার্স এলায়েন্স অব বাংলাদেশ, সংক্ষেপে ‘ইসাব’। সংগঠনটি একশ কুকুরকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে গত ৯ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।
চ্যানেল আই অনলাইনকে আমিনুল ইসলাম মিঠু বলেন: আমরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একশ কুকুরকে র্যাবিস ভ্যাকসিন দিয়েছি। এখানে অনেক কুকুর আছে। কুকুরগুলো খুব এগ্রেসিভ, ফ্রেন্ডলি না। আগে এখানে কুকুর নিধন করা হতো। হাইকোর্টের নির্দেশে তা বন্ধ হয়েছে। গুলশান, ধানমণ্ডি, কারওয়ানবাজারসহ ঢাকার অন্যান্য এলাকার কুকুর মানুষের কাছে আসে। খাবার দিলে পাশে এসে বসে। কিন্তু বসুন্ধরার কুকুরগুলো মানুষের কাছে আসে না।
‘এছাড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় না। ফলে এখানকার কুকুরগুলোকে ভ্যাকসিনও দেওয়া হয় না। আমরা বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে একশ কুকুরকে জলাতঙ্কের টিকা তথা র্যাবিস ভ্যাকসিনের আওতায় এনেছি। খুব শীঘ্রই আবার মাঠে নামবো। এলাকার সব কুকুরকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে।’
তিনি জানান, জলাতঙ্ক রোগের টিকা দিলে সেই কুকুর মানুষকে কামড়ালেও জলাতঙ্ক হবে না। বা সেই কুকুর থেকে অন্য কুকুরেও ভাইরাস ছড়াবে না।
সংগঠনের শুরুর গল্পটা জানতে চাইলে মিঠু বলেন, বিভিন্ন পেশার প্রায় ২০ জন আছেন ইসাবে। আমি সাংবাদিক, একজন আছেন ইঞ্জিনিয়ার, আছেন ডাক্তার। যে কেউ যুক্ত হতে পারেন আমাদের সঙ্গে। ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক কুকুর নিধন করা হচ্ছিল। আমরা এর প্রতিবাদে কারওয়ানবাজারে একটা মানবন্ধন করেছিলাম। সেই থেকে সংগঠন গড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। আমরা চেষ্টা করছি সরকার, সেলিব্রেটি, সচেতন জনতাসহ সব স্তরের মানুষকে নিয়ে প্রাণী সুরক্ষার আন্দোলন পরিচালনা করতে। প্রাণীদের নিরাপত্তা, খাদ্য, বাসস্থান নিশ্চিত করতে।
সংগঠনের তহবিল নিয়ে মিঠু জানান, ইসাবে যারা কাজ করছেন সবাই চাকরিজীবী। নিজেরাই তহবিল গড়ছেন। ভলান্টিয়ার হিসেবে যারা কাজ করছেন তারাও আর্থিকভাবে সাহায্য করছেন।
সরকারী ভ্যাকসিনও কিনে নিতে হয় দাবি করে তিনি বলেন, র্যাবিসিন ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। ফ্রান্স থেকে আমদানি করতে হয়। গুলিস্তানে পাওয়া যায়। যেখানে প্রতি এমএল ভ্যাকসিন আমদানি করতে লাগে তিনশ থেকে চারশ টাকা। সেটাই বিক্রি হয় সাতশ থেকে সাড়ে সাতশ টাকায়। আর সরকার যেটা ফ্রি দেয় সেটাও ফ্রিতে পাওয়া যায় না। পাঁচশ টাকা দিয়ে কিনতে হয়।
মিঠুর চোখ সামনে। কাজ করতে চান আরও। পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব এলাকায় কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি সেখানে ভ্যাকসিন দেওয়া। কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে প্রাণীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা। প্রাণী নিয়ে আরও যারা কাজ করছেন সবার সাথে বসে জোরালোভাবে কাজ করাই ইসাবের লক্ষ্য।
সর্বসাধারণের উদ্দেশে ইসাবের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম মিঠু বলেন, আগে ঢাকায় উন্মুক্ত ডাস্টবিন ছিল। কুকুরগুলো সেখান থেকে খাবার পেত। এখন উন্মুক্ত ডাস্টবিন বন্ধ হওয়ায় কুকুরের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সবার প্রতি আহ্বান রইলো, আপনার নষ্ট খাবারগুলো আশপাশের পশুপাখিকে খেতে দেবেন। তারাও আমাদের পরিবেশের অংশ।