করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সাধারণ ছুটিতে বন্ধ থাকা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি নিতে বারণ করা হয়েছে। এরপরেও রাজধানীর ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ আগামী জুন ২০২০ পর্যন্ত সব টিউশন ফি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)
বুধবার (১৩ মে) ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. হোসনে আরা বেগম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ নির্দেশ দেয়া হয়।
ওই আদেশে বলা হয়, ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজে অধ্যয়নরত সকল ছাত্র/ছাত্রী এবং তাদের সম্মানিত অভিভাবকদের জুন ২০২০ পর্যন্ত টিউশন ফি সহ যাবতীয় বকেয়া আগামী ২১শে জুন/২০২০ এর মধ্যে পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যে সকল ছাত্র/ছাত্রী তাদের টিউশন ফি সহ যাবতীয় বকেয়া ২১ জুনের মধ্যে পরিশোধ করবেন তাদের সকল বিলম্ব ফি মওকুফ করা হবে মর্মে কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজের এক শিক্ষার্থী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমাদের কলেজ অনলাইনে ক্লাস করানো হচ্ছে সেটা ১ মাসও হয়নি, এমনকি সব ক্লাস ও হয়নি। করোনার কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে, এই মুহুর্তে অভিভাবকদের বেতনের দেয়ার কথা জানানোটাও কষ্টকর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) সভাপতি এম এ মুবিন খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আমরা এখনো পাইনি। যদি কোনো এরকম অভিযোগ আমরা পাই, তবে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এপ্রিলের বেতন ও বোনাস পাননি কুমিল্লার সেন্ট্রাল মেডিক্যালের প্রভাষকরা
কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল মেডিক্যাল কলেজের প্রভাষকদের এখনো এপ্রিল মাসের বেতন ও বোনাস দেয়া হয়নি।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মেডিক্যাল কলেজের এক প্রভাষক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘অফিসে ফোন করলে বলা হয় ৭০% বেতন দেয়া হবে, বোনাস দেয়া হবে না। পরে বুধবার (১৩ মে) আমরা সবাই মিলে প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে দেখা করি। উনি আমাদের বলেন, কলেজ ফান্ডে টাকা নাই। তাই, আমাদের বেতন ও বোনাস কাটা করা হবে।’
আরেক শিক্ষক জানান, ‘কলেজ ফান্ড এ একান্তই টাকার সংকট থাকলে এই মাসে যেনো শুধু বোনাস দেওয়া হয়, এবং অফিসিয়ালি কাগজে কলমে ১০০% বেতন ইস্যু করে রাখা হয়। যেহেতু শিক্ষার্থীদের বেতন পরিশোধের উপর কলেজ ফান্ড চলে বলে উনাদের দাবি, তাই সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা তো তাদের সকল বকেয়া বেতন পরিশোধ করবেই। তখন, ওই টাকা থেকে আমাদের এই মাসের বকেয়া বেতন যেনো শোধ করা হয়।’
‘কিন্তু এই সহজ সমাধানেও কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজি হয় নি। উপরন্তু, তারা পরবর্তীতে লেকচারার ছাটাই এর কথা বলে।’
আরেক প্রভাষক জানান, ‘‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূর উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের জানান ‘যা বেতন দেয় তা যেন আমরা তুলে নেই, বাকি সব পরে দেখা যাবে’।’’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন, ‘একটা প্রতিষ্ঠানের বেতন দেওয়ার দায়িত্ব ওই প্রতিষ্ঠানেরই। আমরা তো কোনো প্রতিষ্ঠানকে বেতন ভাতা প্রদানে বাধ্য করতে পারি না।’
এরআগে গত ২ মে, প্রাইভেট মেডিক্যালে কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, করোনাকালে দেশের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, তাই সংগঠনের সদস্যভুক্ত কোন প্রতিষ্ঠানে উৎসব বোনাস প্রদান করা হবে না।
দেশব্যাপি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও সমালোচনা উঠলে ৪ তারিখ জানানো হয় মানবিক দিক বিবেচনা করে ২ তারিখের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হলো।