কতদিন এমন বাংলাদেশকে দেখা যায়নি, তা হিসাব করার ব্যাপার। পরিসংখ্যান বলছে সেটা ছয় বছর আগের কথা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরে ৫৬ রান তুলতে সাত উইকেট চলে গিয়েছিল। ওভালে এদিন এক পর্যায়ে ৪৬ রানে ছিলেন না সাতজন! ভয়ঙ্কর এই পরিস্থিতি লজ্জার রেকর্ডের হুমকিতে ফেলে দিয়েছিল। ছয় বছর আগে বাংলাদেশ সেদিন ওডিআইতে নিজেদের সর্বনিন্ম স্কোর ৫৮তে গুটিয়ে যায়। ভাগ্যিস এই মঙ্গলবার সেটা হয়নি। তবে যেটা হয়েছে, সেটাও কম লজ্জার নয়। ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় বড় পরাজয় দেখতে হলো বাংলাদেশকে! ভাগ্যিস শব্দটা আরেকবার উচ্চারণ করা যায়। কেননা এটা যে প্রস্তুতি ম্যাচ।
বাংলাদেশ ২৪০ রানে হেরেছে। এমন একটা দিনের পর এই তথ্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভারতীয় বোলাররা কি আগুন ঝরিয়েছেন? সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। সেই গুরুত্বের দাম দিতে হলে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার ধরন দেখতে হবে।
ইমরুল (৭), সাকিব (৭) দুজনে পুল করতে যান। প্রস্তুতি ম্যাচে একটু চালিয়ে খেলার ‘ছেলেমানুষি’ দেখানোর অনুমতি থাকে। কিন্তু ইমরুল অফস্টাম্পের বাইরে লাফিয়ে ওঠা বলে যেভাবে পুল করেন, তা ‘ছেলেখেলা’ ছাড়া আর কিছু নয়। সাকিবের বলটা লেগস্টাম্পের উপরে থাকলেও যেভাবে শরীর ঘুরিয়ে তালগোল পাকান তাতে বল ৩০ গজ পার হওয়ার কথা নয়। সাব্বির (০) যাদবকে ডিফেন্স করতে যেয়ে বোল্ড হন। শরীরী ভাষা দেখে স্পষ্ট বোঝা গেছে বলের ওপর ঠিকমতো চোখ ছিল না। মুশফিক (১৩) যখন উইকেটে আসেন, তখন অফসাইডে সারি-সারি ফিল্ডার। মোহাম্মদ সামি অনুমিতভাবেই অফস্টাম্পের বাইরে বল ফেললেন। মুশফিক আলতো করে স্কয়ারকাট করে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়েন। সৌম্য সরকারের (২) আউট নিয়ে যা একটু বিভ্রান্তি। কিন্তু তার শট খেলার ধরন নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া বলে শুরুতে ব্রায়ান লারা কিংবা শচীন টেন্ডুলকার ওভাবে ব্যাট দিতেন কি না সন্দেহ।
আগের দিন ব্যাটিংটা ভালো হয়। তাই এদিন টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব। কিন্তু বোলিং অনুশীলনটাও খুব একটা ভালো হয়নি। ভারত ৩২৪ রান করে বেরিয়ে যায়।
মোস্তাফিজুর রহমান এবং রুবেল হোসেন যথারীতি ভালো শুরু করেন। রুবেল নিজের প্রথম ওভারে রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে শুরু করেন। তার করা অফস্টাম্পের বাইরের বলে পাঞ্চ করতে যান রোহিত (১)। শর্ট অব লেন্থের বল ছিল। সেই সঙ্গে কিছুটা স্লোয়ার। ভেতরের কানা নিয়ে বল স্টাম্প খেয়ে নেয়। এরপর মোস্তাফিজ ঝলক।
ফিজের গুড লেন্থের বলে রাহানে (১১) ব্যাট দিতে যেয়ে ভড়কে যান। চোখ-মুখে এমন একটা ভাব আনেন, যেন বিশ্বাসই করতে পারেননি এভাবেও আউট হওয়া যায়। মোস্তাফিজ শেষ পর্যন্ত ৮ ওভার বল করে ৫৩ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন। ৯ ওভারে ৩ উইকেট নিতে রুবেলের খরচ ৫০ রান।
চিন্তা থাকছে তাসকিনকে নিয়ে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮০ রান খরচ করেছিলেন। এদিনও নিজের চেনা ছন্দে ফিরতে পারলেন না। ৬ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে উইকেটহীন।
ড্রেসিরুংমে বসে মিরাজের বল দেখে স্বস্তি পেতে পারেন নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি। স্পিনপ্রেমী ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা এদিন মিরাজকে ঠিকমতো খেলতে পারেননি। ৯ ওভারে তরুণ স্পিনার রান দিয়েছেন ৩৯, উইকেট নেই।
সাকিব আট বোলারকে ব্যবহার করেন। নিজে ৩ ওভারে ২৩ রান দিয়ে আর আক্রমণে আসেননি। সানজামুল ইসলাম দুই উইকেট নিয়েছেন ৭৪ রানের বিনিময়ে। মোসাদ্দেক ৫ ওভার হাত ঘুরিয়ে ২৯ রান দিয়ে উইকেটহীন।
বোলিংয়ে এমন অম্ল-মধুর দিন যাওয়ার পর ব্যাট হাতে ‘পুরনো ভূতে’র আবির্ভাব। বাংলাদেশ যখন এই স্মৃতির সঙ্গী, তখন ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট দুই খ্যাতিমান ব্যক্তি দুধরনের মন্তব্য করছিলেন ফেসবুকে। সাবেক কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরী কিছুটা হতাশ হয়ে লেখেন, ‘আগের খেলায় শিখেছি অনুশীলন ম্যাচ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আর আজকেরটা তো আরও ঢিলেঢালা, সুতরাং ফুরফুরে মেজাজে খেলা দেখাটাই ভালো|’
বিসিবির সাবেক পরিচালক খন্দকার জামিল উদ্দিন আবার এমনদিনে কিছুটা আশাবাদী, ‘মোরা চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজারে আঘাত হানার পরিবর্তে ওভালে দেখা দিয়েছে। কিন্তু আশার কথা হলো সবাই ফিট আছেন। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ এটা প্রস্তুত ম্যাচ। আসল লড়াইয়ে আমরা ফিরে আসবো।’
খন্দকার জামিল এরপর আবেগী, ‘এগিয়ে যাও টাইগাররা। ভেঙে পড়ো না। আমরা সবসময় তোমাদের সঙ্গে আছি।’