২ এপ্রিল শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের টেনশন- এবারও না জানি এসএসসি’র মত সব পরীক্ষার আংশিক প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়!
এখানে বলে রাখা দরকার, শিক্ষা বোর্ডের কোনো কোনো কর্মকর্তা গত এসএসসি’র প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারে বলার চেষ্টা করেছেন পরীক্ষার পুরো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, আংশিক হয়েছে। এর মানে কী? পুরো প্রশ্ন ফাঁস না হওয়া তাদের সাফল্য? মরণব্যাধি ক্যান্সার পুরো শরীরে হওয়ার দরকার নেই, একটি স্থানে হলেই যথেষ্ট। ক্রমশ তা ছড়িয়ে যাবেই।
যা হোক, প্রশ্নফাঁস যে আমাদের জাতির জন্য গলার ফাঁস হয়ে গেছে, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা এটা রোধ করতে ব্যর্থ, এটা বলতে দ্বিধা করা উচিত না। বরং এটাকে ঢেকে রাখলে দুষ্টুচক্র আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠবে।
আমাদের সবখানেই গোড়ায় গলদ থেকে যায়। আমরা মূল জায়গা থেকে সরে যাই। আজ পর্যন্ত প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত তেমন কোনো নাটের গুরুকে ধরতে পেরেছি? পারিনি। আর যাদের ধরতে পেরেছিও তাদের কি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পেরেছি?
দুষ্টুচক্র সব সময় থাকবে। যারা এ সমাজকে বিভ্রান্ত করবেই। কিন্তু আমরা যারা সচেতন অভিভাবক, যারা মনে করি সন্তানকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলব, তারা কি বিভ্রান্ত হওয়ার পথ থেকে সরে আসতে পারি না? পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে এমনও অভিভাবক দেখা যায়, যারা খুঁজে বেড়ায় কোথায় কার মোবাইলে প্রশ্ন পাওয়া গেছে, সে খবর জানার জন্য কি প্রাণপণ চেষ্টাটাই না তারা করেন। সন্তান দুরে বই পড়ছে, অভিভাবক খুঁজছে প্রশ্ন। কী চমৎকার আমাদের মানসিকতা! এর কারণ ওই যে দৌড় প্রতিযোগিতা। আমার সন্তান অমুকের সন্তানের চেয়ে রেজাল্ট ভালো করবে, যেকোনো মূল্যে সেটা করতেই হবে। পরীক্ষার আগে প্রশ্ন কিনেই হোক আর যেভাবেই হোক। সন্তানকে ‘এ প্লাস’ পেতেই হবে।
এ প্রসঙ্গে আমাদের মাননীয় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সম্প্রতি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সন্তানদের ‘এ প্লাস’ অর্জনে সহায়তায় কোনো অশুভ ও অসৎ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হওয়ার জন্য অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেছেন, অভিভাবকদের শুধু ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষার ফলাফল দেখলেই চলবে না, তাদের নৈতিক অধঃপতনের কথাও ভাবতে হবে।
আমরা এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময়টাতে গণমাধ্যম খুলে পড়তে চাই না, তৃতীয় পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়ে গেল বা রেহাই পেল না সপ্তম পরীক্ষার প্রশ্নও। ধারাবাহিক প্রশ্নফাঁসের খবর আমাদের আতঙ্কিত করে। এটা যেন একটা সিগন্যাল, যে সিগন্যাল আমাদের বলে দেয় জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়ার জন্য অশুভ চক্র সচেষ্ট। জাতিকে পঙ্গু করে দেবার যড়যন্ত্র বললেও বেশি বলা হবে না, বোধ করি। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের দেশে সবচেয়ে বড় যে শাস্তির বিধান রয়েছে সেটাই দেয়া উচিত।
প্রশ্নফাঁসের জন্য যতই কোচিং সেন্টার বন্ধসহ কর্মসূচি নেয়া হোক না কেন কোনোটাই সফল হবে না, যতদিন না পর্যন্ত সর্ষের ভেতরের ভূত তাড়ানো না যাবে।
অভিভাবকদের প্রতি বিনীত অনুরোধ খামোখা পরীক্ষা কেন্দ্রে আগেভাগে গিয়ে ভিড় করে প্রশ্ন খোঁজা থেকে বিরত থাকুন। আপনার সন্তান দেশের ভবিষ্যত। তার শরীরে এখনই রোগ ব্যাধি ঢুকিয়ে দেয়ার মত কোনো প্রতিযোগিতায় নামবেন না।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)।