রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের নামে মিয়ানমারে যেটা চলছে সেটা আসলে নিষ্ঠুর গণহত্যা। সেখানে সাধারণ জনগণকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, নারীদের করছে ধর্ষণ, জ্বালিয়ে দিচ্ছে তাদের বাড়িঘর। এমন অবস্থায় জীবন বাঁচাতে তারা দেশ ত্যাগে বাধ্য হচ্ছে।
বেঁচে থাকার জন্য একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মানুষগুলো অসহায় হাত বাড়ায় আশেপাশের দেশগুলোর প্রতি। অবৈধ অনুপ্রবেশের নামে এই অসহায় মানুষগুলোকে ফিরিয়ে দিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়াটা কতটা অমানবিক কাজ ! ভৌগলিক সীমারেখা, আভ্যন্তরীণ বা বৈশ্বিক কূটনীতি, রাষ্ট্রনীতি…. হেন তেন যে কোন অযুহাতেই এইসব অসহায় মানুষগুলোকে নির্মম মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত রীতিমত অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য ।
রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, বিশ্বনীতি পরে ভেবে আগে সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে এই অসহায় মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ানো আমাদের মানবিক কর্তব্য। হ্যাঁ, জানি আমাদের সামর্থ্য কম; অমুক তমুক দেশ সাহায্য করতে পারে, তারা কেন করছে না?-এরকম কথা আসবে। এসব ভাবতে ভাবতে অসহায় ঐ মানুষগুলোর লাশের সারি দীর্ঘ হতে থাকবে শুধু। বিবেক আর মানবিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ভাববার মত জাতি আমরা মোটেই নই।
যেকোন নীতিতেই অস্ত্রের মুখে নিরীহ অসহায় মানব হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই।
আমাদের রাষ্ট্রীয় পরিচালকদের প্রতি জোর দাবি জানাই সীমান্ত খুলে দিয়ে, সাধ্যের সবটুকু দিয়ে এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর। যারা সামনে এসে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে তাদের নিরাশ না করে সহযোগিতা করা মানবিক কর্তব্য। এরপর আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধানে জোর লাগাতে হবে।
রোহিঙ্গারা না এদিকের, না ওদিকের-কিছু মানুষের পায়ের নিচে কোন মাটি থাকবে না তা হতে পারেনা। জাতিসংঘকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতেই হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আইনি পক্রিয়ার মাধ্যমে হলেও বাধ্য করতে হবে জাতিসংঘকে। চুপ থাকার আর কোন সুযোগ নেই।
কত বিষয় নিয়ে দেখি কত সম্মেলন হয় ! এই বিষয়টা কেন স্থান পায়না সেখানে ? বিশ্ব জনমত তৈরি করতে হবে। তার জন্য মানবতাবোধসম্পন্ন কাউকে না কাউকে নেতৃত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সেই শুরুটা তো আমরাও করতে পারি।
ঐ মানুষগুলোর মুখের দিকে একবার ভাল করে তাকান, দেখবেন সিদ্ধান্ত নিতে খুব একটা ভাবতেও হবেনা। প্রমাণ দেয়ার সময় এসেছে-সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)