‘রাযা’ কোনো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশাকে আরবী ভাষায় বলা হয় । যা আরবী ‘রা’, ‘জিম’ ও ‘হামজা’ বর্ণত্রয়ের সমন্বয়ে গঠিত। মানব জীবনে-আশা-নিরাশার শেষ নেই। মানুষের চাওয়া-পাওয়ারও অন্ত নেই। তবে মুমিনের কাছে প্রভুর দরবারে ক্ষমা পাওয়ার আশা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই প্রত্যাশার সাথে মহান আল্লাহ সম্পর্কে এ ধারণা ও বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরি যে, তিনি অসীম দয়াবান ক্ষমাশীল। বান্দা নিজেকে অপরাধী জ্ঞান করে প্রভুকে ক্ষমাশীল বিশ্বাস করে তার কাছে বিনয়ের সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করাকে আরবী ভাষায় ‘রাযা’ বলা হয়।
‘ক্ষমা’ প্রত্যাশী বিশেষ বান্দাদের কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান গ্রহণ করেছে এবং যারা হিজরত করেছে ও আল্লাহর রাস্তায় কঠোর সাধনা করেছে, তারা আল্লাহর রহমত পাওয়ার প্রত্যাশা করে আর আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়াবান।’ (বাকারা ২১৮) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, সেখান থেকে প্রকাশ্য ও গোপনে এমন ব্যবসার (লাভের) প্রত্যাশায় খরচ করে যে ব্যবসা কখনো নিঃশেষ হবে না। যাতে আল্লাহ পাক তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণ করে দেন এবং স্বীয় অনুগ্রহ তাদের জন্য বাড়িয়ে দেন।’ (ফাতির ২৯ ও ৩০)
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া যেমন ইবাদত, তার সমীপে ক্ষমা পাওয়ার প্রত্যাশা করাও বড় ইবাদত। কারণ তাতে একদিকে আল্লাহর প্রতি বান্দার বিশ্বাস সুদৃঢ় হয়, অন্যদিকে বান্দার মনোজগতে বিনয়ের স্রোতধারা প্রবাহিত হয়। সে কারণে হাদীসে প্রভুর প্রতি ক্ষমা পাওয়ার প্রত্যাশাকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কোনো এক বান্দাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য আল্লাহ পাক হুকুম করবেন। ফেরেস্তারা ওই বান্দাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার সময় সে বারবার আল্লাহর দিকে তাকাতে থাকবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, বান্দা তোমার গুনাহর কারণে তোমাকে নরকে যাওয়া হুকুম দিলাম। তুমি বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছ কেন? বান্দা বলবে, আল্লাহ সারা জীবন একটি বিশ্বাস লালন করেছি মনে মনে, তুমি তো দয়াবান, তোমার ক্ষমাও অবারিত। বান্দার অপরাধ থেকেও তোমার ক্ষমার স্রোত আরও প্রবল। সে জন্য অপরাধী হয়েও তোমার ক্ষমা লাভ করার ভীষণ রকমের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এখন দেখছি তার উল্টো। তুমি আমার প্রত্যাশার বিপরীতে আমাকে ক্ষমা না করে নরকে যাওয়ার হুকুম জারি করে দিলে। সে জন্য বারবার তোমার দিকে তাকাচ্ছি।
আল্লাহ বলবেন, যাও আমার ব্যাপারে তোমার এ বিশ্বাস ও প্রত্যাশার কারণে তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর প্রতি সুন্দর বিশ্বাস রাখা সুন্দর ইবাদত।’ (তিরমিজী) হাদীসে কুদসীতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে আদম! আমার কাছে ক্ষমা লাভের আশায় তুমি আমাকে যতক্ষণ ডাকতে থাকবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করতে থাকব এবং কোনো কিছুর পরওয়া করব না।’
মহান আল্লাহ পবিত্র মাহে রমজানে এই বরকতময় দিনগুলোতে ক্ষমার পবিত্র আশা নিয়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুফতি আবুল কাশেম ফজলুল হক, উপাধ্যক্ষ, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা, মুহাম্মদপুর, ঢাকা