মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর
মামলায় আপীল বিভাগের শুনানিতে প্রধান বিচারপতির কিছু মন্তব্যের কঠোর
সমালোচনা করেছেন সরকারে দুই মন্ত্রী ও বুদ্ধিজীবীরা।
তারা এই জন্য প্রধান
বিচারপতিকে ওই বেঞ্চ থেকে সরে গিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মীর কাসেম আলী
মামলার আবারো শুনানির দাবি জানিয়েছেন। দুই মন্ত্রীর মধ্যে রয়েছেন খোদ
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীও।
‘একাত্তরের গণহত্যাকারীদের বিচারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রঃ সরকার, বিচার বিভাগ ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। আলোচনায় বক্তারা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও বিভিন্ন অনভিপ্রেত মন্তব্য করে সেই ট্রাইব্যুনালকেই বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন প্রধান বিচারপতি।
মুনতাসির মামুন বলেন, ‘উনার সহকর্মী বিচারকরা যারা ওই হাইকোর্টের বিচারক তারা কিন্তু ওই প্রসিকিউশন ও ইনভেস্টিগেশন টিমের তথ্যের উপর ভিত্তি করেই রায় দিয়েছেন। তিনি যখন কথা বলছেন তখন বিচারকদের দোষী করছেন। ১৯৭৩ সালের আইনে তারা বিচার করছেন। তারা জানেন ফৌজদারী আইন ও আন্তর্জাতিক আইন কি। কিন্তু প্রধান বিচারপতি জানেন কিনা সেই প্রশ্ন আমার তুলতে হচ্ছে।’
সরকারের দুই মন্ত্রী বলেন, ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রধান বিচারপতির উচিৎ ওই বেঞ্চ থেকে সরে যাওয়া। তারা মন্তব্য করেন মীর কাসেম আলী কারাগারে থাকলেও তার ছড়ানো অর্থ বাইরে সক্রিয়।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকেই প্রসিকিউশন টিম ও বিচারক নিয়ে আমাদের কথা বলেছেন। আমি বলেছি এখানে যারা আছেন কারোরই অভিজ্ঞতা নেই। ফৌজদারী নিয়ম থেকে বের হতে তাদের কিছু সময় লাগবে কারণ এটি বিশেষ বিচার ব্যবস্থা। এই প্রসিকিউশন ও ইনভেস্টিগেশন টিম ২২টি মামলা নিস্পত্তি করেছে। আজ মীর কাশেম আলীর মামলা নিয়ে যে কথাগুলো আসছে সেরকম কথা কিন্তু অতীতে আসে নি। তাদের সফলতাই আগে দেখতে হবে।’
‘মীর কাশেম আলীর মামলার ক্ষেত্রে পুরো রায়টা আমি পড়েছি। দেশের ১৬ কোটি মানুষ এই মামলার বাদী। রায়ের এক জায়গায় লেখা, অন টোটাল অ্যাডভাইজাল উই ডু নট ফাইন্ড এনিথিং ফ্লট ইন দ্য ইনভেস্টিগেশন টাস্ক। আদালতের এই একটা কথাই যথেষ্ট। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্য আদালতে যে বক্তব্য দিয়েছেন, প্রশিকিউশন ও ইনভেস্টিগেটিং টিমকে আদালতে দাঁড় করাতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন প্রসিকিউশন এই মামলা নিয়ে রাজনীতি করছেন।’
কামরুল ইসলাম বলেণ, ‘তার প্রকাশ্য আদালতে এমন বক্তব্যে আমি সংক্ষুব্ধ। তার মন্তব্যের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রায় অন্যরকম হবে সেটা বোঝায় যায়। তিনি হয় আসামীকে খালাস দিবেন, রিমান্ডে পাঠাবেন। যদি তা না হয় তাহলে অন্যরা বলবে সরকারের চাপে রায় বদলানো হয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এই সংকট প্রধান বিচারপতি সৃষ্টি করেছেন সেটাই সবচেয়ে বড় দুঃখ। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমরা সরকারের অংশ নই। সত্যিই তিনি সরকারের অংশ নন। সরকার একটি দলীয় বিষয়। আইন সবার জন্যই সবার। নুরেমবার্গে আঠারো দিনে লাখ লাখ মানুষের বিচার করা হলো সেটা নাকি ন্যয়বিচার আর আমরা পাঁচবছর ধরে শুনতেই আছি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যুদ্ধাপরাধীর ৫ বছর বা ১২ বছরের জেল হয়েছে। অভিযোগ যেহেতু প্রমাণিত হয়েছে যে সে যুদ্ধাপরাধী, সুতরাং তার নূন্যতম শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।’
‘প্রধান বিচারপতি যদি ওপেন কোর্টে কোনো মন্তব্য করে থাকেন তাহলে সেটা উনারই একজন বিচারপতি হিসেবে, একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে বোঝা উচিত। এবং এমনটা করে থাকলে আমি আহবান করবো উনি সেটা প্রত্যাহার করে নিবেন অথবা উনি এটা মনে করলে একজন প্রধান বিচারপতির পদে আসীন থাকার সুযোগ কতটা আছে সেই বিচার তিনিই করবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর কথা এসেছে। একটা চুক্তি হচ্ছিলো তারা সিমলা চুক্তিতে বলেছিলো পকিস্তানে নিয়ে বিচার করবে। কথা ছিলো পাকিস্তানে তারা ফেরত নিবে। তাই সেই চুক্তির আর কোনো মূল্য নেই। এখন এই বিচার মরণোত্তর হলেও করতে হবে।’
বক্তারা বলেন, বিচার বিভাগের মর্যাদা হানি হয় এমন কিছু বলা কারোরই ঠিক নয়। না নির্বাহী বিভাগ, না বিচার বিভাগ।