জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বদলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রীর ভ্রমণকে নিজেদের জন্য কোন বার্তা হিসেবে নিচ্ছে না বিমান এবং বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামে যোগ দিতে পাঁচ দিনের সফরে রোববার সুইজারল্যান্ডের ডাভোস যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানের বদলে ইতিহাদের ফ্লাইটে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন তিনি। এ সিদ্ধান্তের পেছনে গত নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ত্রুটিপূর্ণ ফ্লাইট দায়ী কিনা, এ প্রশ্ন অনেকের।
তবে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন মনে করছেন, বাংলাদেশ থেকে সুইজারল্যান্ডে বিমানের কোন রুট নেই বলেই প্রধানমন্ত্রীর সুইজারল্যান্ড সফরে বিমানের বদলে ইতিহাদকে বেছে নেয়া হয়েছে।
‘রুট ছাড়া বিশেষ ব্যবস্থায় ঘুরে যেতে খরচ অনেক বেশি পড়ে। তাই অন্য এয়ারলাইনে যাওয়াটাই সুবিধাজনক,’ বলে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে দাবি করেন মেনন।
‘এরপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাধারণত বিমানই ব্যবহার করে থাকেন। এবার কেন সফরের জন্য বিমানের বদলে ইতিহাদকে বেছে নেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে আমার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি,’ বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করেনি। কর্মকর্তারা বলেছেন, নানাদিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ইতিহাদের ফ্লাইটে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন।
রুট জটিলতায় প্রধানমন্ত্রী এর আগেও বিমান ছাড়া অন্য এয়ারলাইনে বিদেশ সফর করেছেন। তবে, সাম্প্রতিক সময়ের বিদেশ সফরগুলোতে তিনি বিমানের ফ্লাইটই বেশি ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যেই হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে গত নভেম্বর মাসে তাকে বহনকারী বিমানের ফ্লাইটকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণ করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী পরে সংবাদ সম্মেলনে নিজে ওই ত্রুটিকে ‘মনুষ্যসৃষ্ট’ বলেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের নেতারা বলেছেন, এটা ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যার আরো একটি চেষ্টা।
ওই ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থা এখন তদন্ত করছে। বিমানের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে বিমানের বদলে ইতিহাদের ফ্লাইট বেছে নেয়াকে অনেকে বিমানের জন্য বিশেষ বার্তা বলে মনে করছেন।
এ বার্তা বা ইঙ্গিতকে কীভাবে নিচ্ছে বিমান?
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে এই প্রথমবারের মতো বাইরের এয়ারলাইন ব্যবহার করছেন এমন নয়। ফ্লাইটের বিষয়টি সরকার ঠিক করে। যখন যেরকমটা সুবিধা হয় সেরকম বিভিন্ন বিষয় মাথা রেখে সিদ্ধান্তটি সরকারের পক্ষ থেকেই নেয়া হয়।
‘সিদ্ধান্তটি বিমান কর্তৃপক্ষের হাতে নেই।’
প্রধানমন্ত্রীর ইতিহাদে ভ্রমণকে বার্তা মনে না করলেও বিমানের উন্নতির জন্য কী করছেন জানতে চাইলে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ব্যাপারটি সরকারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
বিমানের উন্নয়ন নিয়ে বিমানের পরিচালকদের সঙ্গে এরইমধ্যে বৈঠক হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী দু’য়েকদিনের মধ্যে বিমান কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবেদন জমা দেবে।
গত ২৭ নভেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাদে জরুরি অবতরণ করে।
সেখানে ত্রুটি সারিয়ে চার ঘণ্টা পর বুদাপেস্টের উদ্দেশে উড়ে যায় বিমান। ওই বিমানের ইঞ্জিন অয়েলের ট্যাংকের একটি নাট ঢিলে হওয়ার পেছনে নাশকতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে ২৮ নভেম্বর পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিমান মন্ত্রণালয়।
ঘটনা তদন্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) আরও দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুই কমিটি এরইমধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুই দফায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৯ জনকে সাময়িক চাকুরিচ্যুত করে গ্রেফতার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ত্রুটির ঘটনার মামলায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তিন প্রধান প্রকৌশলীসহ সাত কর্মকর্তাকে রিমান্ডে নেয়ার পর তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে আদালতকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।