‘শুটিং শেষে নিজেদের থাকার জায়গায় ফিরছিলাম। বরিশালে একটা বড় অংশের শুটিং হয়েছে। ওখানকার মেঘনা নদীর চরে। ফেরার সময় নৌকায় লোক গুনতে গিয়ে দেখি দুজন নেই। তাদের খোঁজে স্পটে গিয়ে দেখা গেল প্রোডাকশনের দুজনের কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে। নরম বালিতে। উঠতে পারছেনা। জোয়ার এসে গেছে প্রায়। পানি বৃদ্ধি পেয়ে ওদের গলা ছুঁয়েছে। উদ্ধার করা হয় দুজনকে। আশা করি দর্শক সিনেমাটি দেখবেন। চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভালো-মন্দ ধরিয়ে দেবেন। বিশ্বাস রাখি দর্শক ভালো প্রচেষ্টাকে ডুবতে দেবেনা।’
কথাগুলো বলছিলেন তরুণ নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ। ‘গহীন বালুচর’ দিয়ে দর্শকদের কাছে পৌছানোর আগের দিন এসেছিলেন চ্যানেল আইতে। অংশ নিয়েছেন ১০ জনের দলসহ ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানে। সেটি শেষ করে বাহিনী নিয়ে ঢুঁ মেরেছেন চ্যানেল আই অনলাইনে। বাহিনীতে তিনিসহ ছিলেন ছবিটির নির্বাহী প্রযোজক এবং অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, নবাগত আবু হুরায়রা তানভীর, নীলাঞ্জনা নীলা, জান্নাতুন নূর মুন, জীতু আহসান, রুনা খান, রাসেল এবং কোরিওগ্রাফার নাজিয়া বাশার।
জাজের মত পরিবেশক থাকা স্বত্ত্বেও মাত্র ২৮টি সিনেমা হলে ছবি কেন প্রশ্নে সৌদ বলেন, ‘জাজের নয় আমাদের ইচ্ছাতেই এমনটি হয়েছে। ‘আয়নাবাজি’র সাফল্যের গ্রাফ খেয়াল করুন। অল্প থেকে শুরু হয়ে দিন যত গেছে দর্শকের আনুকুল্য পেয়েছে। পরে সিনেমা হল বেড়েছে। আমাদের পরিবেশক জাজ। তারা নিজেদের সিনেমার মত করে আমদের ছবিকে ট্রিট করেছে। তারা নিজেরা একক ভাবে অনেক সিনেমা হল দিতে সক্ষম। কিন্তু আমিই চাইনি। বিশ্বাস করুন ৩০টির ওপরে সিনেমা হলে প্রথম সপ্তাহে মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিলনা। শেষ পর্যন্ত ২৮টি ঠিক করি সবাই মিলে। গল্পটা যদি ভালো লাগে মানুষের তবে আমি খুশি। তারপর মুখে মুখে যদি পৌঁছে যায় মানুষের কাছে এবং দর্শকের আগ্রহ বৃদ্ধি পায় সেটা হবে মূল প্রাপ্তি। ’
কথায় কথায় সময় গড়ায়। নিজের চলচ্চিত্র ‘গহীন বালুচর’ এর তিন নবাগত তানভীর, মুন ও নীলাকে নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সৌদ বলেন, ‘ওদের আগ্রহ এবং নিষ্ঠা সত্যিই প্রশংসা করার মত। একটা তরতাজা অনুভূতির স্বাদ পাবেন দর্শক পাবেন, বিশ্বাস করি। তারা যদি তাদের লক্ষ্য ঠিক রাখে তবে অনেক দূর যাবে।’ লক্ষ্য নিশ্চয় পুরষ্কার বা বিদেশী ফেস্টিভাল?’ প্রশ্ন কেড়ে নিয়ে সৌদ বলেন, ‘একদম না। কোন পুরষ্কার বা বিদেশী উৎসব লক্ষ্য করে নয় স্রেফ বিনোদনধর্মী চলচ্চিত্র তৈরী করতে চেয়েছি। তবে ‘লাঠিয়াল’ বা ‘নয়নের আলো’র মত। সেগুলো কি বিনোদনধর্মী ছিল না? কিন্তু গল্প ছিলো ছবিগুলোর প্রাণ। আমি পরিপূর্ণ গল্পভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছি।’
সৌদ বলে চলেন, ‘সরকারী অনুদান মেলে ৪০ লক্ষ টাকা। সঙ্গে আরো ৮০ লক্ষ টাকা খরচ করেছি। আমার এবং সুবর্ণার প্রতিষ্ঠান ‘সাতকাহন’ এবং ফ্রেন্ডস মুভিজ যৌথভাবে ভাগ করে নিয়েছি খরচ। সিনেমা একদম আলাদা অভিজ্ঞতা। চলচ্চিত্র ভেবে চলচ্চিত্র নির্মাণ এটি আমার প্রথম।’
‘সুবর্ণা মুস্তাফা, রাইসুল ইসলাম আসাদ দীর্ঘদিন পর এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। চলচ্চিত্রটিতে তাদের কেমন পেয়েছেন?’ প্রশ্নে বদরুল আনম সৌদ বলেন, ‘ হ্যাঁ, ৩৩ বছর পর তারা চলচ্চিত্রে এক সঙ্গে কাজ করল। ১৯৮৪ তে ‘নয়নের আলো’ তে শেষ কাজ করেছিল। আর প্রথমটাতো সবাই জানে। সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকির অসাধারণ ‘ঘুড্ডি’। আমি আদর করে মুস্তাফা বলে ডাকি। সে চলচ্চিত্রটির নির্বাহী প্রযোজকও। ইউনিটের সবাই তাকে বাঘ ডাকত। আবার সে ইউনিটে ছিল মায়ের মত। অন্যদিকে আসাদ ভাইকে আমি ডাকি টেনশন মাস্টার। সংলাপ ঠিক মত বলছে কিনা অন্যরা কিংবা সব ঠিক আছে কিনা এ নিয়ে তিনি সবসময় তৎপর থাকতেন এবং সবাইকে তৎপর রাখতেন। তার মত এত মমতা নিয়ে অভিনয়টাকে দেখেনা। তিনি নিজের চরিত্র নয় ভাবেন সবার চরিত্র নিয়ে।’
অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা ও অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদকে নিয়ে বলাটা বাতুলতা জানিয়ে সৌদ বলেন, ‘তারা প্রথমত বন্ধু। আর ৩৩ বছর পর তারা এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। বন্ধুত্বের সেই রসায়ন আর অভিনয়ের পাল্লা কেবল যারা দেখবেন তারা বুঝতে পারবেন।
ছবি : জাকির সবুজ