বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তাদের অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। তবে তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়নি জানিয়ে শিক্ষক নেতারা বলছেন, এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরাসরি আশ্বাস চান তারা।
সোমবার সন্ধ্যায় শহীদ মিনারে গিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এই সমস্যা সমাধানে সকল পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের যুক্তিটা আমরা তুলে ধরবো, আলোচনার মধ্য দিয়ে টেবিলে বসে এই সমস্যার সমাধান হবে।
“কিন্তু এজন্য জীবন দিয়ে আন্দোলন করার কোন দরকার আছে বলে আমরা মনে করিনা।”
মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর শহীদ মিনারে সমবেত শিক্ষকরা তাদের দাবি-দাওয়ার পক্ষে স্লোগান দিয়ে বলেন, ‘জীবন দেওয়ার দরকার আছে। দরকার আছে।’
এর আগে, দাবি মানার আশ্বাসে সহকারী শিক্ষকরা তিন দিনের অনশন ভাঙবেন বলে জানান বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি আনিসুর রহমান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকের পর এই কথা জানান তিনি।
কিছুক্ষণের মধ্যে শহীদ মিনারে গিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী নিজে শিক্ষকদের অনশন ভাঙাবেন বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষকদের এই নেতা।
এই বৈঠকের আগে অনশনের তৃতীয় দিনে বৈষম্য দূর করতে পদক্ষেপ ঘোষণার আগ পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছিলেন অনশনকারীরা।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই অনশন কর্মসূচিতে কয়েক হাজার শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন। তিনদিনের অনশনে প্রায় অর্ধশত শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনদিন না খেয়ে থাকায় বেশ কয়েকজন শিক্ষককে শিরায় স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। অসুস্থদের মধ্যে আহসান হাবিব সাগর নামের এক শিক্ষকের অবস্থা কিছুটা গুরুতর বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক অনলাইন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমদ।
আহসান হাবিব চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আগের বেতন স্কেলগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পেতেন।
কিন্তু ২০১৫ সালের বেতন কাঠামোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ব্যবধান তিন ধাপ। এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। আর প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১০তম গ্রেডে। সহকারী শিক্ষকরা এই বৈষম্য নিরসনে প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিতে ১১তম গ্রেডে বেতন চাই।
শনিবার সকাল ১০টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। শীতের রাতেও শিক্ষকেরা শহীদ মিনারে অবস্থান করেন। বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের ডাকে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সহকারী শিক্ষকদের আটটি সংগঠন এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
সোমবার শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে শহীদ মিনারে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গতকাল রোববার শিক্ষকদের অনশনে সংহতি জানান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।