বইটাকে ঠিক সহজ করে তুলতে চাননা এই লেখক। বই লেখার আগে তিনি মনে করেন একটি থিম ধরে কাজ করবেন তবে সেই থিমটি খুব সহজ হবে না। সবাই যেমন করে ভাবেন তার একটু বাইরে গিয়েই ভাবতে এবং লিখতে পছন্দ করেন এই লেখক। তাই তো বছরে দুইটি বইকেও অনেক বেশি বলেই মনে করেন তিনি।
কথা হচ্ছিলো কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমানের সঙ্গে। এবারের বইমেলায় আসছে তার দুটি বই। একটি গল্পগ্রন্থ অন্যটি আত্নজীবনী। গল্পগ্রন্থটির নাম ‘শহর কিংবা উনশহরের গল্প’। আর আত্নজীবনীর নাম ‘মায়াপারাবার’।
বলেন, অনেক অনেক পাঠক আমার বই পড়বে এমনটা আমি ভাবিনা। কিন্তু যারাই পড়ে তারাও কিন্তু সহজ পাঠক নয়। আমার কঠিন লেখাই তারা পড়েন। তাই এমন পাঁচজন পাঠক থাকলেই আমি খুশি।
‘শহর কিংবা উনশহরের গল্প’ বইটি মূলত একটি গল্পগ্রন্থ। এই নিয়ে অন্তত ১৪-১৫ টি বই বের হলেও বরাবর বই প্রকাশের অনুভূতি নতুন হিসেবেই মনে করেন লেখক পাপড়ি রহমান। এবং সেই অনুভূতি সবসময় আনন্দদায়ক।
লিখতে ভালোবাসেন। তবে লেখালেখির কথা আসলে প্রথমেই মাথায় আসে উপন্যাসের কথা। চেষ্টা করেন নিজের সর্বোচ্চ শ্রম সেই লেখায় দিতে। অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও কম দেননা। তাতে সেটা গল্পগ্রন্থ হোক বা আত্নজীবনী। এবারে বইমেলায় আসন্ন আত্নজীবনীটি তিনি লিখেছেন প্রায় চার বছর ধরে। লেখক স্মৃতিচারণ করেন, সব লেখকের কখনো না কখনো বন্ধ্যাকাল চলে। আমারও চলছিলো। লেখালেখি প্রায় বন্ধই ছিলো। তখন আমারই এক প্রিয় স্যার আমাকে আবার লেখালেখি করার কথা বললেন। তার কথাতে অনুপ্রাণিত হয়েই এবারের গল্পগ্রন্থ ‘শহর কিংবা উনশহরের গল্প’ বইটি লেখা। তার মতো জ্ঞানী মানুষের কথাতেই মূলত আবার এই সাহিত্যদৌড়।
সব লেখকই চান পাঠক তার লেখা বই কিনবে, লেখা পড়বে, পড়ে মতামত দেবে। এই লেখকও তেমনটাই চান। তবে এর পাশাপাশি তিনি চান, প্রত্যেক বাবা মা চেষ্টা করবেন তার সন্তানের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে। শিশুর মধ্যে সেই মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। বইয়ের স্পর্শে যে আত্নিক বন্ধন তৈরি হয় তা আর কোনো কিছুতেই হয় না। আজকাল অনেক শিশুই প্রযুক্তিতে মুখ গুঁজে থাকে। সেটার বদলে যদি ওদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে সেটাও কিন্তু অনেক উপকারী হবে।
মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালির এক অসীম গর্বের জায়গা। কোনো এক সময় নিজের লেখায় সেই সময়টাকেই তুলে আনতে চান পাপড়ি রহমান। তবে সেজন্য দরকার অনেক অনেক পড়াশোনা এবং কাজ। সেটাই করছেন তিনি। বলেন, খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। তাই দরকার এটা নিয়ে বিস্তর কাজ। পড়াশোনা করছি। মুক্তিযুদ্ধের যে দিকগুলোতে কেউ আলো ফেলেনি সেদিকটাকেই আমার লেখার মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই।
দেশের বাইরের অনেক সাহিত্য আমরা পড়েছি। সাহিত্যে বিনিময়ের বিষয়টি আসলে আরো বেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠে। এই লেখক মনে করেন, ঢাকায় লিট ফেষ্টিভ্যাল হয়। সেখানে নানান দেশের নানান সাহিত্যিকরা আসে। সাহিত্যের আলোচনা চলে। সেরকম উদ্যোগও পারে দেশের সাহিত্যকে দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে। তাছাড়া অনুবাদের কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। যদি প্রতিবছর বইমেলা থেকে অন্তত দুইটি নির্বাচিত বই অনুবাদ করা হয় তাহলে সেটাও বেশ ভালো সিদ্ধান্ত হবে। দেখা যাবে ধীরে ধীরে আমাদের সাহিত্য অন্য দেশের পাঠকরা সহজেই পড়তে পারবেন।
পাপড়ি রহমানের লেখা ‘শহর কিংবা উনশহরের গল্প’ গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে চৈতন্য প্রকাশনী। বইটির দাম পড়বে ১৫০ টাকা।