রাজধানীসহ সারাদেশে বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে আজ শুক্রবার শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘শারদীয় দুর্গাপূজা’।
তবে প্রাদুর্ভাব কমলেও করোনার কারণে এবার বিজয়া দশমীতে শোভাযাত্রা হচ্ছে না।
চন্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে গত ১১ অক্টোবর থেকে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়। পরবর্তী ৪দিন রাজধানীসহ দেশব্যাপী পূজামণ্ডপগুলোতে পূজা-অর্চণার মধ্যদিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন।
আজ সকালে দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। পরে বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
বিকেল ৪টায় বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে শাহজাহানপুর বাংলাদেশ রেলওয়ে পূজা কমিটির প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে রাজধানীসহ সারাদেশে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
ঢাকের বাদ্য আর গান-বাজনা ছাড়া বিদায়ের করুণ ছায়ায় সারিবদ্ধভাবে একে একে বুড়িগঙ্গা নদীতে বিসর্জন দেয়া হয় প্রতিমা। একই সময়ে তুরাগ নদীতে চলে বিসর্জন। রাজধানীর প্রায় অর্ধশত মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় ওয়াইজঘাটে।
এসময় সড়কে পুলিশের টহল ও নদীতে ছিল নৌপুলিশের টহল। ফায়ার সার্ভিসের টিমও দায়িত্ব পালন করে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এ বছর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে। আর ঢাকা মহানগরীতে এই সংখ্যা ২৩৮টি।
অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিটি মণ্ডপ ও মন্দিরে ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টায়, ধূপ আরতি ও দেবী-দুর্গার পূজা-অর্চনায় কেবলই ছিল মায়ের বিদায়ের সুর। গতকাল দিনব্যাপী বিভিন্ন পূজামণ্ডপে সারাবিশ্বের কল্যাণ এবং করোনামুক্ত বিশ্ব কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে বিহিত পূজার মাধ্যমে শুরু হয় নবমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পুরাণ মতে, এই তিথিতে দেবী দুর্গার আর্শিবাদ নিয়ে লঙ্কার রাজা রাবণকে বধ করেছিলেন দশরথ পুত্র শ্রীরামচন্দ্র।
এছাড়া, ১০৮টি নীলপদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন রামচন্দ্র। তাই মহানবমীতে ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে ১০৮টি নীলপদ্মে পূজিত হয়েছেন দেবী দুর্গা। নবমী সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয়েছে সন্ধিপূজাও।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে গেলেন স্বর্গলোকের কৈলাসে স্বামীর ঘরে। পরের বছর শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে যা তার বাবার গৃহ। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
করোনার সংক্রমণ কম থাকলেও এবছরও বিজয়ার শোভাযাত্রা হয় নাই। তাই পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জন করা হবে। তবে আজ শুক্রবার জুমার নামাজ থাকায় নামাজের সময় দুপুরে বিসর্জন অনুষ্ঠান করা হয় নাই। বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠ পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, একটি অশুভ উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লাসহ ১০ থেকে ১২টি জায়গায় মন্দিরে ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি জানান, শেখ হাসিনার সরকার এসব অশুভ অপশক্তিকে মাথা তুলতে দেবে না।
অপরদিকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দীর পরিদর্শন করেন।
এর আগে গত ৫ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ২১৩টি। এবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১১৮টিতে। যা গত বছরের চাইতে ১ হাজার ৯০৫টি বেশি। আর ঢাকা মহানগরে পূজা মন্ডপের সংখ্যা ২৩৮টি, যা গতবছর থেকে ৪টি বেশি।