চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রতিভার প্রতিফলন

প্রতিভা মানুষের মজ্জাগত বিষয়, সঠিক চর্চা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিভার বিকাশ ঘটে থাকে। প্রতিভাকে লালন করতে হয়, প্রতিপালন করতে হয়, প্রতিভার বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সময়ও দিতে করতে হয়। অন্যথায় প্রতিভার বিকাশের অভাবে ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃতভাবে ও অনেকটা বাধ্য হয়েই অন্য পেশাতে সংযুক্ত হয়ে যায় এবং ফলশ্রুতিতে আউটপুট হিসেবে যা পাওয়ার কথা তার হিসাব নিকাশে ফলপ্রসূ ফলাফল বের করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। মোদ্দা কথা হচ্ছে, প্রতিভার সম্ভাব্য প্রতিফলন পাওয়ার প্রত্যাশা থাকলে যে ব্যক্তি যে কাজে পারদর্শিতা দেখানোর সক্ষমতা রাখেন তাকে সে পেশাতেই ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ প্রদান অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ক্যারিয়ার গঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যক্তির ভবিষ্যৎ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করা রাষ্ট্র তথা অভিভাবকদের জন্যও কষ্টসাধ্য বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তবে আধুনিক ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার সমন্বয়ে ক্যারিয়ারকে সামনে রেখে মূলনীতি প্রণয়ন করা সম্ভব হলে প্রতিভার লুকায়িত সম্ভাবনাকে প্রতিফলন আকারে দেখা সম্ভবপর হবে বলে মনে করি এবং সেটি সকলের জন্য ইতিবাচক হিসেবে পরিগণিত হবে।
ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিভা তথা সুপ্ত বাসনাকে বিকশিত করার মর্মে অত্যন্ত অর্থবহ আকারে গুরুত্ব প্রদান করা উচিত। কারণ, শিক্ষার্থীর পছন্দ/অপছন্দ, যথার্থ বিকাশ, প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা, পরিবেশ ও প্রতিবেশ, কাজের ক্ষেত্র ইত্যাদিকে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীকে ক্যারিয়ারবান্ধব হতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, তাদেরকে এ জাতীয় সঙ্কট থেকে দূরে রাখার স্বার্থে তথ্যের অবাধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে দেখা যায়, ইন্টারমিডিয়েট ভর্তির সময় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পছন্দসই গ্রুপ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়; বিষয়টি অবিবেচনাপ্রসূত, অবান্তর মনে হয় আমার দৃষ্টিতে। কেননা, পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীকে বাছাই করতে দেওয়া উচিত, কেননা কাজের কাজটি কিন্তু শিক্ষার্থীকেই করতে হবে। সেখানে অভিভাবক নানাভাবে বুদ্ধি, পরামর্শ, অর্থের যোগান, মানসিক সাপোর্ট প্রদান করার ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে কিন্তু প্রকৃত কাজটি শিক্ষার্থীকে করতে হবে। জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চায়, সৃজনশীলতার বিকাশে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিক চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারণের কাজটি শিক্ষার্থীর উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করি।
করোনাকালীন সময়ে বাসায় অবস্থান করার সুবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিনের বেশির ভাগ সময় অনেকেই ব্যয় করে থাকে। সময়টাকে অনেকেই নানাভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে, আপদকালীন পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার জন্য পাশাপাশি সময়টাকে উপযুক্ত উপায়ে কাজে লাগাতেও চেষ্টা করছে অনেকেই। আবার কিছু মানুষজন রয়েছে যারা বিনোদনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুঁ মারছে। বিশেষ করে ইউটিউব, ফেসবুকেও বহুরকমের ফানি পোস্ট দেখা যায় যেসব দেখে অনেকেই বিনোদিত হচ্ছে। তারই ফলশ্রুতিতে কয়েকদিন পূর্বে সাবরিনা, অঙ্কন, রিফা, রিমির পরিবেশনায় ৯০ দশকের চমৎকার কয়েকটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা বেশ ভাল লেগেছে আমার, শেষতক দেখা যায় প্রায় ১৫-১৬ হাজার মানুষ তাদের অসাধারণ পরিবেশনাটি অবলোকন করেছে, পর্যায়ক্রমে সেটি বাড়বে।
ভিডিওটি দেখার পরে বিভিন্ন ধরনের চিন্তা ভাবনা মনের অজান্তেই চোখে ভেসে আসছে, অত্যন্ত সাবলীল এবং পরিচ্ছন্নভাবে গানের সঙ্গে তাঁদের নৃত্যের ছন্দ পরিলক্ষিত হয়েছে। অর্থাৎ গানের সঙ্গে তাল, লয় সবকিছুতেই মুন্সিয়ানার ছাপ ছিল, একটি বিষয় এখান থেকে অত্যন্ত স্পষ্ট যে, মেয়েরা তাদের ইচ্ছেমতো পছন্দসই কাজটিই সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছে এবং সেখানে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ হয়েছে। হলফ করে বলা যায়, তাঁরা যদি নৃত্যকলাকে তাদের পেশা হিসেবে বেছে নেয় তাহলে তাদের সফলতা পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। এখান থেকে খুব জোরের সঙ্গে বলা যায়, ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিক ভাল লাগা, মনের জোর, লেগে থাকার মানসিকতা, সঠিক গাইডলাইন, সুবিস্তৃত ক্ষেত্র ইত্যাদির সমন্বয়ে সুপ্ত বাসনাকে জাগরুক করার মাধ্যমেই প্রতিভার প্রতিফলন দেখা সম্ভব হয় এবং সেটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হিসেবে বিবেচিত হয়।

কাজেই প্রতিভাকে মূল্যায়ন এবং সেটিকে লালন ও ধারণ করতে হবে। জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় সকল জায়গাতেই প্রতিভাকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। প্রতিভা এবং প্রতিভাবান দু পক্ষকেই গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা অনেক সময় দেখি স্কলারশিপ নিয়ে অনেকেই বিদেশে পড়তে যেয়ে পরবর্তীকালে আর ফেরত আসে না। মূল্যায়ন এবং কাজের পরিবেশের অভাব থাকায় বাংলাদেশে ক্যারিয়ার নিয়ে দোটানায় থাকারা বিদেশে চলে যাওয়া বাংলাদেশীরা সহজে দেশে আসতে চায় না। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেওয়া যায়, আমাদের দেশ থেকে অনেকেই বিদেশে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য পড়তে যায়, সেখানে থাকাকালিন সময়ে বিশ্বখ্যাত জার্নালে তাদের আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। কিন্তু দেশে আসার পরে গবেষণার প্রতি তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, ভাটা পড়ে যায় আগ্রহের জায়গায়।

মাঝে মধ্যে পত্রিকার পাতায় দেখা যায়, নামসর্বস্ব পরিবারের ছেলেমেয়েদের সফলতার গল্প, আবার কোথাও কোথাও দেখা যায় নতুন কিছু উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে অনেকেই। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এদের অনেকেই হারিয়ে যায়, তাদেরকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কেননা মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বার্থে প্রতিভা ও প্রতিভাধরদের প্রয়োজনীতা অবশ্যম্ভাবী এবং সেসব দিক বিবেচনায় রেখেই তাদেরকে উপযুক্ত জায়গায় বসিয়ে দায়িত্ব পালনের সুযোগ প্রদান করা জরুরী। আত্নীয়করণ, দলবাজি, দুর্নীতি বন্ধ করে প্রতিভার প্রতিফলন ঘটানোর ‍সুযোগ পেলে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিভাধরদের মাধ্যমে বাংলাদেশে উন্নতি এবং অগ্রগতির সোপান বহুলাংশে বেগবান হবে সেটি নিশ্চিত করে বলা যায়।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)