‘প্রতিবন্ধীতা নয়, সক্ষমতাই হোক নিয়োগের মাপকাঠি’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি দেয়ার জন্য বিজিএমইএ ভবনে আয়োজন করা হয়েছে একটি চাকরি মেলার। মেলায় যোগ্যতা অনুসারে তাৎক্ষণিকভাবে ৭২ জন প্রতিবন্ধী প্রার্থী বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছে।
আয়োজকরা চ্যানেল আই অনলাইনকে প্রতিবন্ধীদের চাকরি পাওয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করে বিজনেস অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন), ক্যাম্পেইন ফর এডুকেশন ও অ্যাক্সেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই মেলা প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি চাকরিক্ষেত্রে নিয়োগকারী ও প্রতিবন্ধীব্যক্তিদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে।
সরেজমিনে মেলায় দেখা গেছে, গ্রামীণ ফোন, ডাচ-বাংলা প্যাকেজিং, স্কয়ার, এসিআই, ডিবিএল, ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ, আকতার গ্রুপ, গাজী গ্রুপসহ ২০টি কোম্পানি স্টল বসিয়েছে। এছাড়াও প্রায় একশর বেশি কোম্পানির প্রতিনিধিরা মেলায় অংশ নিয়েছেন। তারা সরাসরি প্রতিবন্ধী চাকরি প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করে তাদের সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করছেন। মেলায় চাকরি প্রত্যাশী প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণীরা ছিল উদ্যোমী এবং চাকরি প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ছিল যথেষ্ট আন্তরিক।
জানতে চাইলে মেলার সহ-আয়োজক ইউসেফের প্রশিক্ষণ শাখার উপ-প্রোগ্রাম পরিচালক রাশেদুল হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এই মেলার প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, তাদের কাজের দক্ষতা ও সামর্থ্য বিষয়ে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে জানানো এবং নিয়োগকারীদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমুলক কর্মসংস্থান সম্পর্কে সচেতন করা।
তিনি বলেন, মেলায় ২৫৫ জন প্রতিবন্ধী প্রার্থী চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। যাচাই-বাছাই করে তাৎক্ষণিক ৭২ জনকে চাকরি দিয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি। এছাড়া বাকিরাও পর্যায়ক্রমে চাকরি পাবেন বলে প্রত্যাশ করছি।
এর আগে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী মো. আবুল কালাম আজাদ আয়োজকদের উদ্দেশে বলেন, এমন একটা পরিকল্পনা করা দরকার, যাতে প্রতিবন্ধীরা সহজে চাকরি পায়। তবে চাকরি দেয়ার আগে এসব লোকদের দক্ষতা উন্নয়নে করতে হবে। কারণ দক্ষতা উন্নয়ন না করলে কোম্পানিগুলো তাদের বোঝা মনে করবে।
বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করার পর অন্যরাও এ কাজে এগিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, দেশের এক শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে ২০২১ সালে মধ্যম ও ২০৪১ সালে উন্নত আয়ের দেশে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এখন থেকে তাদের চাকরির ব্যবস্থা না করলে এক সময় তারা বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা সবার দায়িত্বের অংশ। তৈরি পোশাকখাতে ইতিমধ্যে অনেকের চাকরি হয়েছে। অন্য খাতগুলোকেও এগিয়ে আসা দরকার।
তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের এই নেতা বলেন, বর্তমানে ব্যবসা করতে গেলে প্রতি পদে পদে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। ন্যয়ভাবে কাজ করতে যেয়েও অনেকে হয়রানির শিকার হন। এসব বাধা-বিপত্তি না আসলে ব্যবসা খাত আরো অনেক প্রসারিত হতো। দেশও এগিয়ে যেত। কারণ এখন যে কাজ ৩০ দিনে করা সম্ভব বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেই কাজ করতে এক বছর লেগে যায়।
অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করা ঠিক নয় মন্তব্য করে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, করুণা নয়, সক্ষমতা দিয়েই প্রতিবন্ধীরা চাকরি পাওয়ার অধিকার রাখে। অতএব লোক দেখানোর জন্য নয়, তাদের যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তারা যে ধরনের কাজ করতে সক্ষম বা পছন্দ করে সে ধরনের কাজই তাদের দেয়া উচিত।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খান বলেন, প্রতিবন্ধীদের দক্ষতা তৈরি করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।