গ্রাম থেকে গ্রামে পাঠাগার গড়ার নেশায় ছুটে চলছে একদল বই প্রিয় যুবক। অনেকেই এদের পাঠাগার প্রেমী বলেন। অনেকে আবার বই পাগল বেকারের দল বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে মুখ ভরে হাসিতেই যেন তৃপ্তি পান। কিন্তু কারো কথায় কর্ণপাত নেই তাদের। সব সমালোচনা মাথা পেতে নিয়ে প্রত্যেকেই গর্ব করে নিজেদের পরিচয় দেন জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন (জাপাআ) এর সদস্য হিসেবে।
সমাজের জন্য প্রত্যেকেরই শপথ একটি। ‘বই পড়ি পাঠাগার গড়ি স্লোগনে’ বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি করে পাঠাগার গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে এই সংগঠন। এই তরুণ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী আরিফ চৌধুরী শুভ।
মাস গড়িয়ে বছর যায়। তাদের কাজের পরিধিও বাড়ে শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে পাড়ায় আর পাড়া থেকে মহল্লায়। অনেকটা প্রচারবিহীন কাজ করে যাওয়া এই তরুণেরা সবাই উচ্চ শিক্ষিত যুবক। কেউ পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কেউ আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করে কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত। বইয়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসায় তারা একত্রিত হয়েছে একটি সংগঠনের মধ্যে। শুধু নিজেরাই বই পড়ে না, অন্যের বই পড়ার জন্যে গড়ে তুলেছেন জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন (জাপাআ) নামের সংগঠন। প্রত্যেককেই পাঠাগার গড়ার কাজে উদ্ধুদ্ধ করে আরিফ শুভ ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে গড়ে তোলেন জাপাআ। ২২ জানুয়ারি জাতীয় পাঠাগার আন্দোলনের দ্বিতীয় জন্মদিন পালিত হয়ে গেলো। জন্মদিন উপলক্ষে সংগঠনটির সদস্য, উপদেষ্ঠাবৃন্দ এবং শুভাকাঙ্ক্ষিরা মিলিত হয় রাজধানীর বাংলামোটর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে।
দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে পথচলা আরো বেগবান করতে আরিফ চৌধুরী শুভকে সভাপতি, মো. সোহেল রানাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৩ সদস্যের একটি কার্যকরী পরিষদ ঘোষণা করেন উপদেষ্ঠা পরিষদের অন্যতম সদস্য, বুয়েটের সাবেক ডীন ও এশিয়ার এডুকেশন এক্সিলেন্স এওয়ার্ড প্রাপ্ত গবেষক ড. এম ফিরোজ আহমেদ।
তিনি বইপ্রেমী এই তরুণদের বলেন, পাঠাগার আন্দোলন নামে দুই বছর আগেও আমি কিছু চিন্তা করতে পারিনি এই বাংলাদেশে। আমি কোথাও এমন অভিন্ন আন্দোলনের কথা শুনিনি।পাঠাগার গড়ার জন্য আন্দোলন করতে হবে সেটিও চিন্তা করিনি। তবে জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন সারাদেশ ব্যাপী পাঠাগার গড়ার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আমি সেটাকে সাধুবাদ জানাই।
পরে ড. এম ফিরোজ জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন (জাপাআ) এর ওয়বসাইটেরও উদ্বোধন করেন।
এর আগে সূচনা বক্তব্যে জাপাআ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আরিফ চৌধুরী বলেন, আমরা ১০টি পাঠাগার দিয়ে শুরু করেছিলাম। আমরা সারাদেশে ২০০টির বেশি পাঠাগারকে অনুপ্রেরণা দিতে পেরেছি। এই সময়ে বাংলাদেশে সুস্থ ও অহিংস সমাজ গঠনের জন্যে একটি সম্মিলিত আন্দোলনের প্রয়োজন মনে করি। সেটি হলো পাঠাগার আন্দোলন। শুধু পাঠক সৃষ্টিই নয়, বিপথগামী তরুণ সমাজকে মাদক, ধর্ষণ, আত্মহত্যা ও সকল অপকর্ম থেকে ফিরিয়ে আনার জন্যে সমাজে পাঠাগারের বিকল্প নাই।