শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা রাষ্ট্রকে অশান্ত করে তোলা ছাড়াও ভিসির বাসভবনে হামলা, ভাংচুর ও তাকে হত্যা প্রচেষ্টাকে গৌণ করে তুলে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতেই গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা প্রবাহে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুল তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে একটি গোষ্ঠী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ।
রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলেই ভিসির বাসভবনে হামলা
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়: শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি ও অনুভূতিকে পুঁজি করে স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন রকমের গুজব ছড়িয়ে ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা করছে।
‘‘এরই অংশ হিসেবে ৮ এপ্রিল রাতে আবু বকর নামে একজন শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে গুজব ছড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে বর্বরোচিত হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ এবং সপরিবারে উপাচার্যকে হত্যা প্রচেষ্টা চালানো হয়।’’
অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচেনায় এশাকে বহিষ্কার
কবি সুফিয়া কামাল হলের ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়: ১০ তারিখ রাতে ছাত্রলীগের একজন নেত্রী কর্তৃক অপর এক ছাত্রীর রগ কাটার গুজব ছড়িয়ে হলে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। মিথ্যা গুজবের ওপর ভিত্তি করে হলের শত শত শিক্ষার্থী রুম থেকে বের হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকলে হল প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল টিমের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক মৌখিক তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ভূত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচেনায় একজন ছাত্রীকে (ইফফাত জাহান এশা) বহিষ্কারসহ প্রশাসন দ্রুত কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করে।
‘‘তথাপি কিছু আন্দোলনকারী ছাত্রী এশাকে নির্মমভাবে মারধর, বস্ত্রহরণ ও জুতার মালা পরিয়ে দেয়। হল প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় মেয়েটিকে কোনোরকম প্রাণে বাঁচানো হয়।’’
অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের আলোকে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের ১৮/০৪/২০১৮ তারিখের সভায় (এশার) সাময়িক বহিষ্কারাদের প্রত্যাহার করা হয়।
এই ঘটনাটিকে কোনো কোনো মহল ভিন্নভাবে উপস্থাপনের প্রয়াস নেয় বলেও অভিযোগ করা হয়।
মধ্যরাতে কাউকে বের করে দেওয়া হয়নি
শিক্ষক সমিতি দাবি করেছে মধ্যরাতে সুফিয়া কামাল হল থেকে মধ্যরাতে কোনো ছাত্রীকে বের করে দেওয়ার ঘটনা সত্য নয় দাবি করে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের অভিভাবকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ওই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়: ১৯ এপ্রিল দুপুর সাড়ে বারোটায় কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানতে পারেন যে, কয়েকজন শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব, বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য তথ্য প্রচারের মাধ্যমে হলে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। হল কর্তৃপক্ষ ৪জন ছাত্রীকে চিহ্নিত করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা লিখিত স্বীকারোক্তির মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে।
‘হলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে উক্ত ৪জন ছাত্রীর স্থানীয় অভিভাবকদের ফোন করে বিকেলের মধ্যে হলে আসার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে তিনজন অভিভাবক পর্যায়ক্রমে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টার মধ্যে হলে উপস্থিত হন। হল প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনাক্রমে তাদের সম্মতিতে তিনজন ছাত্রীকে অভিভাবকদের সাথে বাসায় পাঠানো হয়।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার যে কোন অপচেষ্টা ছাত্র-শিক্ষকরা সম্মিলিতভাবে রুখে দাড়াঁনোর প্রত্যয়ও ব্যক্ত করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সুফিয়া কামাল হলের বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা দেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান। সমাপণী বক্তব্য দেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক আফতাব আলী শেখ, অধ্যাপক জিয়া রহমান, অধ্যাপক জিনাত হুদা প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন চলার সময় ক্লাবের প্রবেশমুখে কয়েকজন ছাত্রীকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। মুখে কালো কাপড় বাঁধা এই ছাত্রীদের সবার হাতেই ছিলো প্ল্যাকার্ড। সেখানে লেখা ছিলো ‘গুজব ছাড়াচ্ছে কে? বিচার চাই’।