দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের ৭ম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তারা। ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জড়িতরা মনে করেন, সবাই এগিয়ে আসলে পরিবেশ রক্ষায় আরো এগিয়ে যাবে দেশ।
শনিবার দুপুরে চ্যানেল আইয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ‘প্রকৃতিবন্ধু’ সম্মাননা জানানো হয় পাঁচ পথশিশুকে। শহর, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, নদী, ডাস্টবিন ইত্যাদি থেকে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, বিভিন্ন ময়লা কুড়িয়ে পেটের ভাত জোগাড় করতে গিয়ে অজান্তেই পরিবেশ পরিছন্ন রাখছে এসব শিশুরা। তবে, অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এ কাজ শিশুদের জন্য নয়, আমাদের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদেরই দায়িত্ব। এদেরকে স্কুলে পাঠিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিশুরা অবহেলিত। অনেক শিশুর অভিভবাবকও নেই। সবাই মিলে চেষ্টা করলে এদের স্কুলে পাঠানো সম্ভব। এজন্য তিনি প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এই শিশুদের নিয়ে আরো বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এদিকে, জীবনে প্রথমবারের মতো এ ধরনের অনুষ্ঠানে আসার সুযোগ পেয়ে খুশি এসব শিশুরা। উচ্ছিষ্ট কুড়ানোর চেয়ে লেখাপড়া করা অনেক সহজ বলে জানায় তারা।
বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশকে ভালো রাখতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যেখানে সেখানে উচ্ছিষ্টগুলো ফেলে শহর জঞ্জালময় করে ফেলছি। অবহেলিত শিশুদের ব্যাপারে তিনি বলেন, এই উচ্ছিষ্টগুলো শিশুরা সংগ্রহ করছে, কাজটি তাদের জন্য দুরহ। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন তাদেরকে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের ৭ম বর্ষপূর্তিতে তিনি সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।
বক্তব্য রাখেন, ইমপ্রেস টেলিফেল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। তিনি বলেন, আমাদের চারপাশ সুন্দর থাক, প্রকৃতি ভাল থাক- এটা সবারই চাওয়া। সবার এই চাওয়া নিয়েই কাজ করছে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। আর এ কারণেই এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সবাই। ফাউন্ডেশনের কাজের সফলতা কামনা করেন তিনি।
আরো বক্তব্য রাখেন, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক আবদুর রশিদ মজুমদার। তিনি বলেন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা বাড়ছে। এ কাজের জন্য তিনি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন এমন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রকৃতি সংরক্ষণের ব্রত নিয়ে গড়ে ওঠে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। দেখতে দেখতে সাত বছর পূর্ণ হলো প্রতিষ্ঠানটির। ২০১০ সালের ১ আগস্ট থেকে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বহুমাত্রিক পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রেক্ষাপটে গবেষণা, সচেতনতা, শিক্ষামূলক ও তথ্যবহুল প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’-এর পথ চলা শুরু হয়।
দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নীতি নির্ধারক মহলের সামনে তুলে ধরতে গত সাত বছরে দুর্গম পাহাড় থেকে গভীর অরণ্য আর সাগরতলে ছুটে গেছে প্রকৃতি ও জীবন দল। অল্প সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠানটি দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানটির ২৩৭টি পর্ব প্রচারিত হয়েছে। প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক বহুমাত্রিক কাজের জন্য দেশে-বিদেশে ফাউন্ডেশন এবং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু সম্মানিত হয়েছেন। ফোবানা এ্যাওয়ার্ড-২০১৬, জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৫, চাঁদ সুলতানা পুরস্কার-২০১৫, বিজনেস এক্সিলেন্সি এ্যাওয়ার্ড সিঙ্গাপুর-২০১৪, বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন-২০১৩, এইচএসবিসি-দি ডেইলি স্টার ক্লাইমেট অ্যাওয়ার্ড-২০১২ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। প্রতি বছরের মতো এবার প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন চ্যানেল আই পরিবেশ সংরক্ষণ পদক প্রদান করা হবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর।