চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্রকৃতির ভাঙন কিংবা দেয়ালে মূর্ত শৈশব স্মৃতি

যেন শৈশব স্মৃতিকে উস্কে দিল আলোকচিত্রশিল্পী রাসেল চৌধুরী ‘অ্যাবস্ট্রাকশান বাই নেচার’

মেঘ দেখে ভাল্লুক কিংবা দাড়িওয়ালা দাদু, দেয়ালে বা পুরনো স্টিলের আলমারির রঙ উঠে যাওয়া অংশ থেকে, বা যেকোন তুচ্ছ সারফেস থেকে বিভিন্ন চিত্র বের করে এনে কতো গল্প কল্পনা করে থাকে শিশুরা। আমাদের সবারই আছে এমন শৈশব যেখানে আমরা দেয়াল, সিলিং, আসবাব ইত্যাদি থেকে দেখে দেখে নানা ইমেজ তৈরি করতাম। আলোকচিত্রশিল্পী রাসেল চৌধুরীর প্রথম একক ফটো-প্রদর্শনী ‘অ্যাবস্ট্রাকশান বাই নেচার’ যেন সেসব শৈশব স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়।

উদ্বোধনী দিনে অতিথিদের সাথে আলোকচিত্রশিল্পী রাসেল চৌধুরী

বড়বেলায় এসে ফেলে আসা শৈশবের সেই কল্পনা প্রবণ মন থেকে তৈরি গল্পগুলোর কথা মনে করে যেন দর্শক মনের অজান্তে বর্তমান ও অতীতের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেন, নস্টালজিক হয়ে পড়বেন। রাসেলের ছবিগুলো মূলত পলেস্তরা খসা, রঙ জ্বলে যাওয়া পাত্র, ভাঙা বালতি, পানের পিক, আবর্জনা, সমুদ্রপাড়ের নোনা পানিতে ক্ষয়ে যাওয়া পাথর থেকে বের করে আনা ইমেজের প্রতিচ্ছবি।

প্রদর্শনীর শিরোনাম প্রসঙ্গে শিল্পী রাসেল চৌধুরী বলেন, এই ইমেজগুলো সব প্রকৃতির তৈরি, সেইসাথে এসব ইমেজের ভেতরে আমরা যেসব গল্প খুঁজে পাই তাও আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অনুষঙ্গ।

তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে ১৭ই আগস্ট। চট্রগ্রামের চিত্রভাষা গ্যালারিতে। প্রতিদিন ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রদর্শনীটি শেষ হচ্ছে রবিাবর(১৯ অাগস্ট)।

এদিকে উদ্বোধনী দিনে ছিলো ছবিগুলো নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের। যেখানে উপস্থিত ছিলেন লেখিকা ফেরদৌস আরা আলীম, শিল্পী ঢালী আল মামুন, ফটোগ্রাফার মউদুদুল আলম, ফটোগ্রাফার শোয়েব ফারুকী, ফটোগ্রাফার মইনুল আলম, শিল্পী দিলারা জলি, ওয়াহিদ মালেক, কবি আবুল মোমেন, লেখক খ ম বখতিয়ার, কবি আহমেদ মুনীর। প্রতিদিন প্রদর্শনী শেষে ছবি বিষয়ক আলোচনার সাথে কবিতা ও গানের আয়োজন করা হয়।

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী দিনে আয়োজক এবং প্রদর্শনীতে আসা শিল্পীরা ‘অ্যাবস্ট্রাকশান বাই নেচার’ নিয়ে বলেন, চট্টগ্রামে এই প্রথম এমন বিচিত্র ধরনের ফটোগ্রাফির প্রদর্শনী হচ্ছে। ছবিগুলো যেন প্রকৃতিকে নতুন করে ডিকন্সট্রাক্ট করছে। যেকারণে প্রতিটা ছবিতেই একই সাথে অনেক মুখ, ইমেজ বা ঘটনা গল্পের সন্ধান পাওয়া যায়। যা একইসাথে অনেক রকম বোধের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

প্রদর্শনীতে আসেন প্রখ্যাত শিল্পী ঢালী আল মামুন। তিনি বলেন, মানুষের অগ্রগতির সাথে সাথে প্রকৃতির যে ভাঙনের চিত্র তা রাসেলের ছবিতে উঠে এসেছে।

কবি সেলিনা শেলী বলেন, এমন আয়োজন চট্টগ্রামে সম্ভবত প্রথম যেখানে শুধু একটি শিল্পের প্রদর্শনীর সাথে অন্য শিল্পের সাথে মেলবন্ধন করা হচ্ছে একইসাথে।

প্রদর্শনীর অন্যতম আয়োজক আসমা বীথি বলেন, সাধারণত চট্টগ্রামে এমন আয়োজন হয় না বললেই চলে। একজন তরুণ শিল্পীর প্রদর্শনীতে এমন অভূতপূর্ব সাড়া পেয়ে ভালো লাগছে। এটি ভবিষ্যতে তরুণদের শিল্পসংক্রান্ত কাজে উৎসাহিত করবে বলে বিশ্বাস করি।

আলোকচিত্রী রাসেল চৌধুরীর জন্ম এবং বেড়ে উঠা চট্টগ্রামে। তিনি অ্যাবস্ট্রাক্ট ফটোগ্রাফি শুরু করেন ২০০৭ সালে। দুবাই আর্ট ফেস্টিভালে ২০১১ সালে তাঁর ছবি প্রথম প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফটো-জার্নালে তাঁর ছবি ফিচার হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।