তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জীবন যাত্রার ব্যয় এবং কারখানা মালিকদের সক্ষমতা বিবেচনা করে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের আহবান জানিয়েছেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
একই আহ্বান জানিয়ে বিজিএমএইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, পোশাক শ্রমিকদের প্রয়োজন বিবেচনা করেই মজুরি নির্ধারণ করা দরকার। কিন্তু ১৬ হাজার দাবি করা বাস্তবসম্মত নয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিজিএমই ভবনে ‘লীড গ্রিন ফ্যাক্টরি এ্যাওয়ার্ড সিরোমনি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। এর আগে বিজিএমএইর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণে তাদের প্রয়োজন ও কারখানার সক্ষমতা বিবেচনা করে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধানের দাবি জানালে তাকে সমর্থন জানিয়ে বন মন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
বিজিএমইএ’র সহযোগিতায় ইউনাইটেড ষ্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) ও গ্রিন বিজনেস সার্টিফিকেশন ইনকর্পোরেট এর যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষ ১৩ টি গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ কারখানাকে সম্মাননা দেয়া হয়।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পোশাক কারখানা নিয়ে একসময় নেতিবাচক ধারণা ছিল। এখন গর্ববোধ করি। কারণ সারা বিশ্বে সবুজ কারখানার র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা প্রথম ১০টি কারখানার মধ্যে ৭টি বাংলাদেশের। দেশের ১৩টি কারখানা এখন লীড প্লাটিনাম রেটেড। ৬৭টি কারখানা ইউনাইটেড ষ্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল থেকে লীড সনদ পেয়েছে। আর ২৮০টি কারখানা পাইপ লাইনে আছে।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, পোশাক রপ্তানিতে ভারত আমাদের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। অথচ সেই ভারতের সবুজ কারখানা মাত্র ৫টি আর এ স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে ২০টি। শুধু তাই নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনেক সূচকেই আমরা তাদের চেয়ে এগিয়ে।
দেশের ৪০ লাখ মানুষ তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করে উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বর্তমানে পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয় প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। আশা করি, আগামী ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে তা ৫০ থেকে ৬০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে।
অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারন নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্যকারীদের উদ্দেশে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের ব্যাপারে আমরা সতেচন। নতুন ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হয়েছে। শ্রমিকদের প্রয়োজনীয়তা ও সক্ষমতা বিবেচনা করেই মজুরি বোর্ড মজুরি ঘোষণা করা হবে।
‘কেউ ১৬ হাজার বা ১৮ হাজার বলে শ্রমিকদের উস্কানি দিবেন না। কারণ এই পরিমাণ মজুরি বাস্তবসম্মত নয়। মজুরির বিষয়টি ওয়েজ বোর্ডের উপর ছেড়ে দেয়া ভাল।’
এসময় তিনি পোশাক খাতের শ্রমিকদের সবচেয়ে ভদ্র বলেও মন্তব্য করেন।
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নির্ভরতা কমিয়ে অন্য খাতে বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, চামড়া ও ফুটওয়ার শিল্প-এ দুটি খাত রপ্তানিতে ভাল অবদান রাখতে সক্ষম হবে। তাই খাত সংশ্লিষ্টদের রপ্তানি বাড়াতে এগিয়ে আসতে হবে। একই সাথে এসব খাতে প্রযোজনীয় সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
জিবিসিআই’র এশিয়া প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল কৃষ্ণনান পাদনামাভন, রেমি হোল্ডিংসয়ের মীরান আলী, প্ল্যামি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
লীড গ্রিন ফ্যাক্টরি এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ১৩ টি কারখানা হলো- রেমি হোল্ডিংস, তারাসিমা এ্যাপারেলস, প্লামি ফ্যাশনস, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও, কলামবিয়া ওয়াশিং প্লান্ট, ইকোটেক্স, এসকিউ সেলসিয়াস ইউনিট-২, কানিজ ফ্যাশন, এসকিউ বিরিকিনা, এসকিউ কোলব্লাংক এবং এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড।