ঘোষিত মজুরি নিয়ে দুই-একটি শ্রমিক সংগঠন উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুল তথ্য দিয়ে পোশাক শ্রমিকদের উস্কানি দেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্যই শ্রমিক নেতারা শ্রমিকদের নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ কার্যালয়ে ‘পোশাক শিল্পের ন্যূনতম মজুরি ও বর্তমান পরিস্থিতি’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, পোশাক শিল্পে নিম্নতম মজুরি নিয়ে কয়েকটি মহল থেকে বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। এতে জনমনে গভীর সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি বলেন, সব পক্ষের সাথে আলোচনা করেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শ্রমিকদের মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। কারখানা মালিকেরাও তা মেনে নিয়েছে। কিন্তু কয়েকটি এনজিও এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতারা মজুরি বিষয়ে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে এবং শ্রমিকদের উস্কানি দিচ্ছে। পোশাক খাতকে অস্থিতিশীল করার লক্ষে তারা এ ধরনের হীন কাজ করছে।
এ সময় ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে পোশাক শিল্পে মজুরি ৩৮১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে মজুরি বাড়ছে বলে জানায় বিজিএমইএ।
‘জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন’ নামের একটি শ্রমিক সংগঠন আংশিক সত্য, বিকৃত ও ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে অভিযোগ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সংগঠনটি বিভিন্ন ভুল তথ্য সম্বলিত প্রচারপত্র বিলি করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তারা এই ঔদ্ধত্য কোথায় পেলো?
‘২০১০-১৮ সাল পর্যন্ত পোশাক শিল্পের মজুরি বৃদ্ধির হার ৩৮১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তারপরও তথা কথিত শ্রমিক নেতারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ খাতকে অস্থির করার পাঁয়তারা করছে।’
গত শুক্রবার প্রেসক্লাবের সামনে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ওই শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে সমাবেশ করেছিল পোশাক শ্রমিকেরা।
নতুন মজুরি বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জ হবে মন্তব্য করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কারখানা সংস্কার, মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ২০১৪-১৮ সাল এই চার বছরে প্রায় ১২শ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের আশঙ্কা ভবিষ্যতে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। তাই নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন বিশাল চ্যালেঞ্জ হবে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে সরকার।
ঘোষণা অনুযায়ী, দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে বেসিক ৪ হাজার ১০০ টাকা; বাড়ি ভাড়া ২০৫০ টাকা; চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা; যাতায়াত ভাতা ৩৫০ টাকা; খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছিল সরকার। সেই হারেই এখন বেতন পাচ্ছেন শ্রমিকরা।
তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি করে আসছে শ্রমিকরা। এর বিপরীতে পোশাক শিল্প মালিকরা প্রস্তাব করেন ৬ হাজার ৩৬০ টাকা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা করার পক্ষে মতামত দিয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, মঈনুদ্দিন আহমেদ ও মাহমুদ হাসান খান প্রমুখ।