রোগীদের জিম্মি করা ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যুসহ চিকিৎসক বা হাসপাতালের নানা বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললেই হয়রানি নয়তো ধর্মঘটের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে।
২৯ জুন দিবাগত রাত ১টায় গলা ব্যথার চিকিৎসা নিতে এসে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফা নামের এক শিশু মারা যায়। তার বাবার অভিযোগ চিকিৎসকদের অবহেলায় সন্তান মারা গেছে। শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও ওই হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
এছাড়া রোববার বেলা ১১টার দিকে থেকে নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার সময় হাসপাতালে বিদেশি অনুমোদনহীন ওষুধ, ড্রাগ লাইসেন্সের নবায়ন না করাসহ নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে। সেসময় ম্যাক্স হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযুক্ত চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান এবং জরিমানার প্রতিবাদে চট্রগ্রামের সব বেসরকারি হাসপাতালের সেবা বন্ধ ঘোষণা করে মালিকরা। এর আগে চিকিৎসকদের সংগঠনের বৈঠকে ওই শিশুর মৃত্যু প্রসঙ্গে প্রতিবাদী সাংবাদিকদের প্রসঙ্গে নানা ধরণের উস্কানিমূলক ও বেআইনি কথাবার্তা বলা হয়। বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিক মাধ্যমসহ সর্বস্তরে ক্ষোভ দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
এভাবে ঘোষণা দিয়ে ধর্মঘট করায় চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিএমএ ওই ধর্মঘট প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়। এরপরই সোমবার ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়েছে। তাদের এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক।
চিকিৎসার মতো মহান কর্মে যে বা যারা যুক্ত আছেন, তারা প্রতিনিয়ত অসুস্থ মানুষের জীবনের প্রতিকূলতা দূর করছেন এবং জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু ইদানীং চিকিৎসা সেবার চেয়ে ব্যবসা হিসেবে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে নানা প্রেক্ষাপটে অভিযোগ উঠছে। দায়িত্ব অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগে কোনো ঘটনা ঘটলে তা নৈতিক বা অনৈতিক যাইহোক প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিকিৎসকদের মধ্যে বিস্ময়কর ঐক্য দেখা গেছে। কোথাও কোনো গ্রামে বা দূর হাসপাতালে একটি ঘটনায় গোটা জেলা, বিভাগ এমনকি গোটা দেশের চিকিৎসকদেরকে ধর্মঘটে যাওয়ার মতো ঘটনা দেখা গেছে। বিষয়টি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে কোনো পেশাজীবীই দেশেই আইনের উর্ধ্বে না, দোষ-ভুল হলে তা জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করার কোনো সুযোগ দেশের আইন ও সংবিধানে নেই।
চিকিৎসকদের এভাবে ধর্মঘটের বিষয়ে ২০১৬ সালের ২৯ মে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন সুর্প্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রিটে দেশের নাগরিকদের জীবন রক্ষার্থে এবং রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের ধর্মঘট বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়। এছাড়া তারা ডিউটিকালীন সময় কোন ধর্মঘট করতে পারবে না বলেও রিটে বলা হয়েছে। সেটা এখনও শুনানির জন্য অপেক্ষায় আছে। এ বিষয়টিতে একটি নির্দেশনা জরুরি ভিত্তিতে আদালত থেকে পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট সকল মহল সাবধান হবে বলে আমাদের ধারণা। এছাড়া যত্রতত্র হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স ও তাদের সেবার মান মনিটরিংও জরুরি। আশা করি সংশ্লিষ্ট সকলে এ বিষয়ে আন্তরিক হবেন।