চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি ও অস্থির জনগণ

বাঙালি খুব সহজে তার স্বভাব বদলাতে পারে না। ভোজনরসিক এ জাতির কাছে জীবনের মূল উপপাদ্য হলো-খাবার। প্রতিটি নারীকে তটস্থ থাকতে হয় রান্নার কায়দা, স্বাদ নিয়ে। রান্নার স্বাদ বাড়াতে পেঁয়াজ আর তেলের বিকল্প কিছু চিন্তাতে থাকে না। তেলে ঝালে মসলাজাতীয় খাবারপ্রেমী বাঙালির কাছে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের এ খবর কত বড় দুঃসংবাদ তা বোঝা যায় বাজার পরিস্থিতি দেখে।

ভারত পেঁয়াজ দিবে না এ সংবাদ প্রচার হতেই মানুষের হিড়িক পড়েছে পেঁয়াজ কেনায়। অন্যদিকে বিক্রেতারা রাতারাতি দাম বৃদ্ধি করে দিচ্ছে। ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের মানসিকতা দেখে মনে হয়, দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করাই যেন মুখ্য বিষয়।

পরনির্ভরশীল হয়ে থাকার বিপরীত প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে তা গত বছর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির বন্ধ করার পরই উপলদ্ধি করেছে সরকার ও জনগণ। এ অবস্থায় অতীতকে স্মরণ রেখে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত না নেয়ার দায় কার এ প্রশ্নটি স্বভাবতই এসে যায়। শুধুমাত্র ভারতের ওপর পেঁয়াজের জন্য নির্ভর হয়ে থাকা কোনোভাবেই সঠিক বিষয় হতে পারে না। বিকল্প চিন্তা করা হলে এ বছর জনগণ পেঁয়াজ নিয়ে অস্থির হতোনা।

ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে বলা হচ্ছে। আর এ পরিস্থিতিকে হাতিয়ার করে দেশের বাজারে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। যার কারণে রাতারাতি বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গত বছরের ৩০০ টাকা দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা থেকে বাঁচতে মানুষ বাজারে ছুটছে। প্রাত্যহিক জীবনে পেঁয়াজ খাবার পরিমাণ কম করার সে প্রচেষ্টা চালু রাখতে পারেনি বলে মানুষ থেকে অতিরিক্ত দাম নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে বিক্রেতারা।

বাংলাদেশের বাজারে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা যুগের পর যুগ চলে আসছে। যার ফলে দেশিয় পণ্য উৎপাদন করে কৃষকরা যথাযথ মূল্য পায় না। ভারত বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ করে দেয়ার পর বাজারে গো-মাংসের দাম বৃদ্ধি পায়। এমনকি কোরবানির ঈদে গরু সংকট তৈরি হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশের খামারিরা ভারতীয় গরুর উপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায়। একইভাবে অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনে অন্য দেশের প্রতি নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে সরকার ও জনগণকে। এর পাশাপাশি মানুষকে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে অভ্যস্থ হতে হবে। তাহলে দেশের উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার বাড়লে উৎপাদক ন্যায্য দাম পাবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করবে।

সরকারি হিসাবে বর্তমানে বাংলাদেশে ২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। তবে পেঁয়াজ মাঠ থেকে ঘরে তোলার সময় প্রায় ৫ লাখ টন নষ্ট হয়ে যায়। হিসাব মতে, দেশের চাহিদা মোতাবেক বছরে ৩০ লাখ টনের ১৯ লাখ টন বাজারে থাকে। বাকি ১১ লাখ টন বিদেশ থেকে রপ্তানি করা হয়।

রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতীয় পেঁয়াজ মূল্যমান অনুপাতে কম হবার কারণে তাদের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে আছে বাংলাদেশ। যার ফলে ভারত তাদের ইচ্ছামত রপ্তানি ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত করে বিপাকে ফেলছে বাংলাদেশের জনগণকে। ভারতের বিকল্প অন্য দেশ থেকে আকাশ বা নৌপথে পেঁয়াজ রপ্তানি ব্যয়বহুল বলে বাজারে সেসব দেশের পেঁয়াজের দাম হয় বেশি। যা মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে। কিন্তু পেঁয়াজ ছাড়া রান্না হয় না এ মানসিকতার কারণে মানুষ গত বছর উচ্চমূল্যেও পেঁয়াজ কিনেছে। হয়তবা এবারও এ অবস্থা দেখা যাবে বাজারে।

এ অবস্থায় পেঁয়াজ সংকটকে প্রতিবছরের সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন ও মজুদের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। আর এ কাজটি করা অসম্ভব নয় । দেশের কৃষকরা যদি যথাযথ মূল্য এবং সরকারের সহযোগিতা পায়, তাহলে তারা পেঁয়াজ উৎপাদন করে অন্যদেশের প্রতি মুখাপেক্ষী হবার সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে। পেঁয়াজের ঝাঁজ থেকে বাঙালিকে খাদ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার এখনই সময়। সে সাথে মনে রাখতে হবে, খাদ্য স্বনির্ভরতা একটি দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে নবদুয়ার উন্মোচন করে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)