বাংলাদেশে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পশিক্ষার স্বপ্নদ্রষ্টা চিত্রশিল্পী শশীভূষণ পালের হাতে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মহেশ্বরপাশা স্কুল অব আর্ট’ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের ১৯ বিশিষ্ট নাগরিক। অবিলম্বে ফেসিলিটিজ অধিদপ্তরকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শত বছরের পুরানো স্থাপনাটিকে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের অধীনে এনে ‘শশীভূষণ পাল চিত্রশিল্প জাদুঘর’ এ রূপ দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
সোমবার মঞ্চনাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক এবং মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তারা বলছেন: পূর্ব বাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশের শিল্পরুচি-বোধ, ইতিহাস, ঐতিহ্যের স্মারক ১৯০৪ সালে শিল্পী শশিভূষণ পাল কর্তৃক স্থাপিত দেশের প্রথম অংকন শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মহেশ্বরপাশা স্কুল অব আর্ট। নিজ বাড়িতে তিনি এই শিল্প বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন শশীভূষন পাল। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৯২৯ সালে নিজ বাড়িতেই চিত্রশিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সুরম্য ভবন নির্মাণ করা হয়।এই ভবনটিতে দীর্ঘ সময় আর্ট স্কুলের কার্যক্রম চলে। বর্তমানে ঐতিহ্যের স্মারক এ ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য দরপত্র আহ্বান করাহয়েছে। আমরা ফেসিলিটিজ অধিদপ্তরের এহেন দায়িত্ব জ্ঞানহীন ঐতিহ্য ও ইতিহাস ধ্বংসের কর্মকাণ্ডে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ ।
ভবনটি ঘিরে প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে । ১৯৭৪ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ও কবি জসিমউদ্দীন এই প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশের প্রথম অংকন শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানর মর্যাদা দিয়েছিলেন। শিল্পী এস এম সুলতান নানা সময়ে এ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন।
১৯৮৩ সালে আর্টস্কুলটি খুলনা শহরে স্থানান্তরিত হয়ে খুলনা আর্ট কলেজ ও বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে খুলনা আর্ট ইনস্টিটিউট হিসাবে পরিচালিত হচ্ছে।
গতশতকে শশিভূষণ পাল নামে একজন শিল্পপ্রেমী মানুষ তাঁর নিজ বাড়িতে বাংলাদেশের প্রথম চিত্রশিল্প বিদ্যালয় স্থাপন করে যে নজির স্থাপন করেছিলেন তাআমাদের ইতিহাসের গৌরবের অধ্যায়! নিজ বাড়িতে নিজস্ব চেষ্টায় যে সুরম্য ভবন তৈরী করেছেন তা আমাদের ঐতিহ্যের স্মারক!
সেই স্মারক ভেঙ্গে ফেলার অর্থ হচ্ছে নিজ গৌরবের ইতিহাস থেকে বাংলাদেশকে এবং দেশের জনগনকে বিচ্ছিন্ন করা। আমরা এহেন অপ-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে এ ভবন রক্ষা করে তা প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের অধীনে “ শশীভূষণ পাল চিত্রশিল্প জাদুঘর” এ রূপ দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে সাক্ষর দাতা অন্যান্যরা হলেন: আব্দুল গাফফার চৌধুরি, সৈয়দ হাসান ইমাম, অনুপম সেন, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, সারওয়ার আলী, আবেদ খান, সেলিনা হোসেন, লায়লা হাসান, আবদুস সেলিম, মফিদুল হক, শফি আহমেদ, শাহরিয়ার কবির, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মুনতাসীর মামুন, সারা যাকের, শিমূল ইউসুফ ও গোলাম কুদ্দুছ।