করোনা মহামারির মধ্যেই বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে পুশইনের অপচেষ্টা করছে বিএসএফ। স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে তা প্রতিহত করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। আলোচনার শুরুতেই বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত এমন কয়েকটি ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া যাক-
১) ১১ এপ্রিল ভোর সোয়া ৬টায় বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে বাংলাদেশে পুশইনের চেষ্টা করে বিএসএফ। বিজিবি টহল দলের বাধায় সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
২) ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টায় রামগড় সীমান্ত দিয়ে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ঢোকানোর চেষ্টা করে বিএসএফ। এবারও টহল দলের বাধার মুখে পড়ে অপচেষ্টা। দু সপ্তাহ পর ১ মে আবারও সেই ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইনের চেষ্টা করে বিএসএফ। আবারও বিজিবির বাধার মুখে পড়ে। এবার পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয় বিএসএফ।
৩) এবারের ঘটনা পঞ্চগড়ে। ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ভারতীয়কে বাংলাদেশে পুশইন করলে সে স্থানীয় জনগণের হাতে ধরা পড়ে। পরে বাংলাদেশের জনগণ মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠায়।
৪) ২৩ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৫টা। আবারও সেই বুড়িমারী। এক মানসিক ভারসাম্যহীন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করে বিএসএফ। স্থানীয় জনগণ এতে বাধা দিলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে বিজিবি। এ সময় ৩০ জন বিএসএফ সদস্য শূন্যরেখার ৫০ গজ ভেতরে বাংলাদেশের মাটিতে এসে ৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে। এতে এক বিজিবি সদস্য আহত হন।
৫) ২৮ এপ্রিল বেলা সোয়া ১২টা। নীলফামারী সীমান্তের শূন্যরেখায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন ভারতীয়কে রেখে যায় বিএসএফ। পরে বিজিবির তৎপতায় রাতে ভারতের ভেতরে চলে যায় ওই ব্যক্তি।
এতোগুলো সিরিজ ঘটনা নিশ্চয়ই কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কিন্তু এরপরও বেসিক জার্নালিজমের মাথা খেয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদে অন্ধ ভারতীয় মিডিয়া বলছে উল্টো কথা। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আগরতলা থেকে রিপোর্ট করেছে- BSF sees pattern in mentally unsound individuals being pushed into India from Bangladesh- এই শিরোনামে।
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? কলকাতার সাংবাদিক অতনু সিংহ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মোদী-শাহ যেভাবে ফেইক বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ তত্ত্বের মাধ্যমে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ-ফোবিয়া তৈরি করে ভারতের অন্দরে থাকা সর্ববঙ্গীয় পরিসরের বড় অংশের বাঙালি-সহ সকল বাংলাভাষী মানুষকে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরার বাংলাভাষী মানুষকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসাবে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রহীন করতে চায়, যাকে ফলাও করে ‘জাতীয় নাগরিক পঞ্জি’র (এনআরসি) কাজ হিসাবে প্রচার করা হচ্ছে, সেই অপরাজনীতি বা বাঙালি বিদ্বেষী হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানি রাজনীতির একটা ছোটখাটো নমুনা এইটা, যা ভয়ঙ্কর। লকডাউনের সুযোগ নিয়ে ভারতের বাঙালি/বাংলাভাষী ‘মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে বাংলাদেশে বিএসএফকে দিয়ে পুশ-ইন করানোর মাধ্যমে ভারতীয় বাঙালিকে রাষ্ট্রহীন করার কাজটা যেমন সারা হচ্ছে, তেমনই বাংলাদেশের দ্বারা এই ব্যাপারে প্রতিহত হয়ে উলটে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দিকেই একটি সর্বভারতীয় মিডিয়াকে দিয়ে আঙুল তোলানো হচ্ছে, যাতে বানোয়াট সংবাদকে সামনে রেখে হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানি ফ্যাসিবাদী চক্র নতুন করে বাংলাদেশ ফোবিয়া সৃষ্টি করে ভারতীয় বাঙালি/ বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে নতুন করে এনআরসির ষড়যন্ত্র শুরু করা যায়৷ করোনার লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে এই ঘৃণ্যকাজ করা হচ্ছে বলে সন্দেহ৷’
একদিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতার এক তরুণ বুদ্ধিজীবী বলছেন, ‘এটা বাংলাকে বাংলাশূন্য করার এক কেন্দ্রীয় চক্রান্ত। করোনা মহামারিও দিল্লির সাম্রাজ্যবাদীদের হৃদয় স্পর্শ করছে না। তারা আপাতত পাগল দিয়ে এনআরসি বাস্তবায়ন শুরু করেছে।’ আর হিন্দিত্ববাদী-হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনবিরোধী সামাজিক-রাজনৈতিক প্লাটফর্ম বাংলাপক্ষের এক নেতা বলছেন, ‘ইন্ডিয়ান মিডিয়া এখন বাংলাদেশ ফোবিয়া বিক্রি করে। সত্যমিথ্যা এখানে মূখ্য নয়।’
যার মানে দাঁড়াচ্ছে, করোনা উপদ্রুত জনপদে বিএসএফের এই অমানবিক আচরণের বিরোধিতা হচ্ছে খোদ ভারত ভূখণ্ডেই। কলকাতার সাংবাদিক অতনু সিংহর মতে, বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের বাঙালি সৈন্যরা কাজ করে না। তাই বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাথে তারা এ ধরণের অমানবিক আচরণ করতে পারে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)