বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নে কর্ণফুলী নদীর তীরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম নুরুর মরদেহ পাওয়া যায়। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী তার শরীরে গুলির চিহ্ন আছে, হাত ছিল বাঁধা। পরিবারের অভিযোগ, আগেরদিন বুধবার রাতে নুরুকে চট্টগ্রাম নগরীর চন্দনপুরার বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বিএনপি নেতারা পুলিশের একজন উপপরিদর্শকের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, তার নেতৃত্বেই নুরুকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, এরপর তাকে গুলি করে হত্যা করে কর্ণফুলী নদীর তীরে লাশ ফেলে দেওয়া হয়। তবে স্বাভাবিকভাবেই ওই উপপরিদর্শকসহ পুলিশ নুরু হত্যায় তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। নুরুই যে প্রথম এরকম হত্যাকাণ্ডের শিকার মোটেই তা নয়। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় এলিট ফোর্স র্যাব গঠনের পর থেকেই আমরা বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা যে হয়নি বিভিন্ন সময়ে পরিবারগুলোর অভিযোগই তার প্রমাণ। বরং বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি নতুন করে যোগ হয়েছে ‘গুম’-এর অভিযোগ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার অবশ্য বরাবরই ‘গুম’ বা ‘বিচার-বহির্ভূত’ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। তাদের দাবি, সন্ত্রাসীরা প্রকৃত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ই নিহত হয় এবং কেউ কেউ লুকিয়ে থেকে পরিবারকে দিয়ে ‘গুম’ করানোর অভিযোগ আনার চেষ্টা করে। এর মধ্যেই অবশ্য প্রকাশ্য হয়ে যাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় বিচার হয়েছে যা আমাদের কিছুটা হলেও আশাবাদী করে। তারপরও বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং পরে মরদেহ পাওয়া যাওয়া কিংবা ‘গুম’ হয়ে যাবার খবর আতঙ্কিতও করে। চট্টগ্রামের ছাত্রদল নেতা নুরুর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা প্রশ্ন করতে চাই, পুলিশের কেউ যদি সত্যিসত্যিই নুরুকে উঠিয়ে না নিয়ে থাকে তাহলে তার পরিবার অভিযোগ জানানোর পর পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছিল? আমরা একথাও বলতে চাই, পুলিশ যদি সত্যিসত্যিই জড়িত না থাকে তাহলে তাদের পরিচয়ে নুরুসহ যাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে বা ‘গুম’ করে ফেলা হয়েছে- সেই অপরাধীদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করতে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে। এক্ষেত্রে শুধু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে দায় এড়ালেই চলবে না, পুলিশ যে আন্তরিক সেটার প্রমাণও দিতে হবে।