ডিবি পুলিশ নয়তো অন্যকোনো বাহিনীর পরিচয়ে মহাসড়কে ওষুধের কাঁচামাল ডাকাতি করে আসছিল চক্রটি। বিদেশ থেকে আনা প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ওষুধের কাঁচামাল লুটের ঘটনার জেনে ৩ জনকে আটক করলে বিষয়টি সামনে আসে।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান ও রাজশাহীর রাজপাড়া এলাকা থেকে ওই চক্রের তিন সদস্যকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)। আটকরা হলেন- অপু রোজারিও (৬০), রুহুল আমিন (৩৫) ও জামাল হোসেন (৩২)।
র্যাব জানায়, সড়কে ওষুধের মূল্যববান কাঁচামাল টার্গেট করে ডাকাতি করে আসছিলো চক্রটি। আর এইসব কাঁচামাল পরিবহনের তথ্য কার্গোর কেউ কিংবা কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কেউ তাদেরকে সরবরাহ করতো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডাকাতদের কারা তথ্য দিয়ে সহায়তা করতেন এবং ডাকাতি হওয়া এসব কাঁচামাল কোথায় বিক্রি হতো তা পরবর্তী তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলেও জানায় র্যাব।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
তিনি জানান, গত ১৪ জানুয়ারি বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ওষুধের কাঁচামাল শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের কাভার্ড ভ্যানে গাজীপুরে নেওয়া হচ্ছিলো। রাত সাড়ে নয়টার দিকে কালিয়াকৈর এলাকায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে কয়েকজন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৬৯ ড্রাম কাঁচামাল লুট করে নিয়ে যায়। লুট হওয়া সেসব কাঁচামালের মূল্য প্রায় ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
এ ঘটনায় ১৫ জানুয়ারি কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার ছায়াতদন্ত শুরু করে র্যাব।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলাবাগান ধানাধীন পশ্চিম রাজাবাজার এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের মূল হোতা অপু রোজারিওকে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার ভোরে রাজশাহী থেকে রুহুল আমিন ও জামাল হোসেনকে আটক করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬০ ড্রাম ওষুধের কাঁচামাল জব্দ করা হয। এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি কালিয়াকৈর থানা পুলিশ এই ডাকাত দলের আরো ৬ সদস্যকে গ্রেফতারসহ ২০৯ ড্রাম কাঁচামাল উদ্ধার করে।
র্যাব-৪ অধিনায়ক বলেন, চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে পুলিশ, ডিবি, সিআইডি পরিচয়ে মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছিললো। ডাকাতির সময় তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতো হ্যান্ডকাপ, ওয়াকিটকি সেট ও রিফ্লেকটিং জ্যাকেট ব্যবহার করতেন।
এ চক্রের মূলহোতা অপু রোজারিও। সে ছাড়াও তার দলে আরো ১০-১২ জন সদস্য আছে। অপু তার দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছাড়া কারো সঙ্গে কথা বলতেন না। ডাকাতি কার্যক্রমের সকল পরিকল্পনা সম্পন্ন করে তার দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের মাধ্যমে অন্যান্য সদস্যদের জানাতেন। তার নির্দেশ মোতাবেক নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হয়ে ডাকাতি সম্পন্ন করা হতো।
আটকরা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের ওষুধের কাঁচামাল ডাকাতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এছাড়াও ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালের কাঁচামালসহ বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধের কাঁচামাল ডাকাতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যহত আছে বলেও জানান তিনি।