টাঙ্গাইলের গোপালপুরে পুলিশের নির্যাতনে হাকিম (৫০) নামের এক মাংস ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী। এসময় পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় এক পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকালে উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের ঝাওয়াইল বাজারের পাশের একটি জমিতে তাস খেলারত কয়েকজন ব্যক্তিকে দেখে অভিযান চালায় পুলিশ।
‘এসময় চারজনকে আটক করলে নিহত হাকিম দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকেও আটক করে বুট দিয়ে লাথি মেরে গাড়িতে তোলে পুলিশ। কিছুদূর যাওয়ার পরে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে অন্য আটককৃতদের থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।’
পরে স্থানীয়রা হাকিমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে পুলিশের দাবি, জুয়ার আসর থেকে পালনোর সময় আহত হন হাকিম। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
তবে পরিবারের দাবি, আটকের পর নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত হাকিমের মেরুদণ্ডের হাড়ের পিছনে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. হারুন অর রশিদ।
এ ঘটনায় পুলিশের এসআই আবু তাহের ও এএসআই আশরাফুল আলমের বিচারের দাবিতে হাসাপাতালের মূল ফটকে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী। সন্ধ্যার পর থেকেই টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। হাসপাতালের ভিতরেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয় ওসিসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যকে। এসময় পুলিশের সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এতে রোকন নামে এক পুলিশ সদস্য ও ৫ জন বিক্ষোভকারী আহত হন।
প্রত্যক্ষ্যদর্শী এক রাখাল জানান, এসআই আবু তাহেরে ও আশরাফুল ইসলাম তাদের আটক করেন। হাকিম দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকেও আটক করেন। এসময় তাহের বুট দিয়ে আঘাত করলে হাকিম ঢলে পড়েন। ওই অবস্থাতেই তাকে তাহেরের নিজস্ব মাইক্রোবাসে তোলা হয়। কিছুদূর যাওয়ার পর তাকে রাস্তায় ফেলে চলে যান।
গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.হারুন অর রশিদ জানান, মৃত অবস্থাতেই হাকিমকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার মেরুদণ্ডের নীচে আঘাতের ক্ষত চিহ্ন রয়েছে।
গোপালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান আল মামুন জানান, জুয়ার আসরে অভিযান চালান তারা। এসময় চারজনকে তাস ও নগদ টাকাসহ আটক করা হয়। এসময় হাকিম দৌঁড়ে পালিয়ে যান। পরে তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও বলেন, আঘাতের কারণেই যদি হাকিমের মৃত্যু হয় তাহলে ময়নাতদন্ত সাপেক্ষে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ্য নেয়া হবে।
সংবাদ পেয়ে গোপালপুর-ভূয়াপুর আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনির, পুলিশ সুপার সনিজত কুমার রায়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।