ভারতের বাংলা সিরিয়ালের জনপ্রিয় তারকা বিক্রম চট্টোপাধ্যায় লালবাজারে পুলিশের খাতায় অনেক দিন পলাতক ছিলেন। পুলিশ বলেছে, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে বাসা থেকে উধাও হয়ে যান বিক্রম। বাসায় ফোন করেও বিক্রমের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ সময় কানাডায় যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদনও করেন তিনি। পুলিশ আরও দাবি করেছে, দীর্ঘদিন গা-ঢাকা দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবারই কিছুক্ষণের জন্য বাসায় আসেন বিক্রম।
কিন্তু বিক্রমের মা মল্লিকা চট্টোপাধ্যায় গতকাল শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তার ছেলে এতদিন তাদের কসবার সুইনহো লেনের ফ্ল্যাটে পরিবারের সঙ্গেই ছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা করেছেন, তাদের সঙ্গে বাইরে বেরিয়েছেন। আর পুলিশ যা বলছে, পুরেটাই মিথ্যা।
মল্লিকা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘পুলিশ ইচ্ছা করলেই তাদের বাসায় আসতে পারত, কিন্তু আসেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের ফোন করেনি, কোনো যোগাযোগও করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে এক বন্ধু এসে বিক্রমকে তার বাসায় নিয়ে যান। তখনই পুলিশ রাস্তায় একটি মলের সামনে বিক্রমকে গ্রেফতার করে।’
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ কসবার অ্যাক্রোপলিস মলের সামনে থেকে বিক্রম চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ দল। তাকে টালিগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সেখানে সামান্য হালকা খাবার আর সকালে ডিম-পাউরুটি ছাড়া কিছু খাননি বিক্রম।
গ্রেফতারের সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বিক্রম বলেন, ‘আমি কী করেছি? কেন আমাকে ধরছেন?’ পুলিশের একজন কর্মকর্তা এ সময় তাকে বলেন, ‘যা বলার, থানায় গিয়ে বলবেন।’ এরপর পুলিশের গাড়িতে উঠে বসেন বিক্রম।
সংবাদ মাধ্যমকে পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারই তারা জানতে পেরেছে হাইকোর্টে বিক্রমের আগাম জামিনের শুনানি হবে আগামী ১৩ জুলাই। এর পরই বিক্রম ধরে নেন, আপাতত তার কোনো ভয় নেই। নিশ্চিন্ত মনে সুইনহো লেনে নিজ বাড়ি থেকে সল্টলেকের কোনো বন্ধুর বাসার নৈশ আসরে যোগ দেওয়ার জন্য বের হন। এক বন্ধুর বুক করে দেওয়া অ্যাপ-চালিত ক্যাবে ওঠেন বিক্রম। আর সেই বন্ধুর ফোনে আড়ি পেতেই বিক্রমের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে পুলিশ।
অনেক দিন থেকেই পুলিশের খাতায় পলাতক ছিলেন বিক্রম। পুলিশ তখন জানিয়েছিল, খোঁজ চলছে। বিক্রমের বিরুদ্ধে তাদের হাতে জোরালো তথ্য–প্রমাণ আছে বলেও দাবি পুলিশের।
এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিক্রমকে আলিপুর আদালতে হাজির করা হয়। আদালত আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
গত ২৯ এপ্রিল বিক্রম চট্টোপাধ্যায় গাড়ি দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। গাড়িতে এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জনপ্রিয় মডেল সোনিকা সিংহ চৌহান। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ভোর চারটা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতায় রাসবিহারী মোড়ের কাছে লেক মলের সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুর পেছনে সেদিন গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে থাকা বন্ধু বিক্রমের বেসামাল ও বেপরোয়া আচরণকে দায়ি করেছে পুলিশ। বিক্রমের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে আদালতে পুলিশের আবেদন গৃহীত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে বিক্রমের।
আদালতে পুলিশের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিক্রম দুর্ঘটনার আগে দু’টি পানশালায় দফায় দফায় মদ্যপান করেন। ফরেনসিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই রাতে বিক্রমের গাড়ির গতি একবারও ৯০-এর নিচে নামেনি। এক সময়ে তা ১১৫ পর্যন্ত উঠেছিল। দুর্ঘটনার ঠিক সাড়ে চার সেকেন্ড আগে গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০৫ কিলোমিটার। দুই সেকেন্ড আগে ছিল ঘণ্টায় ৯৩ কিলোমিটার। দুর্ঘটনাটি ঘটার দেড় সেকেন্ড আগেও ব্রেক কষেননি বিক্রম। যেহেতু সামনের দিকে ধাক্কা লাগেনি, তাই গাড়ির এয়ারব্যাগও খোলেনি। বিক্রমের সিটবেল্ট বাঁধা থাকলেও সোনিকার ছিল না।
বিক্রম চট্টোপাধ্যায় সর্বশেষ অভিনয় করেন স্টার জলসার জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘ইচ্ছে নদী’তে।