মশারির চার কোণা কেন হয় ? তিন বা পাঁচ কোণা কেন হয় না? আপনারা কখনও এমন প্রশ্নের মুখে পড়েছেন? আমি পড়েছি। এক বড়ভাই হঠাৎ প্রশ্নটা করে বসলেন। তিনি অবশ্য উত্তরও দিয়ে দিয়েছিলেন। উত্তর একটু পড়ে বলছি। একটা ঘটনার কথা বলে নেই-
বছর খানেক আগে এই বড়ভাইকে ফোন দিয়েছিলাম। কী করছেন জিজ্ঞেস করতেই ভাই বললেন: কাপড় ধুচ্ছি। আমি বললাম- ভাই, এই বয়সে কাপড় ধোয়ার বিষয়টা কেমন যেন দেখায়। দ্রুত বিয়ে করেন। আপনাকে আর কাপড় ধুতে হবে না। বড়ভাই বিয়ে করলেন। আমার ধারণা তার দিন সুখেই কাটছিল। কারণ, বিপদে পড়লে পরামর্শের জন্য আমাকে ফোন দেন। তিন চারমাস চলে গেল। ভাই কতটা সুখে আছে জানার জন্য আমিই ফোন দিয়ে বললাম, ‘ভাই কী করছেন?’ ভাই গলার স্বর একটু নামিয়ে বললেন: দু’জনের কাপড় ধুচ্ছি।
আরেক বড় ভাইকে দেখেছি সাত আট বছর সংসার করছেন। স্বামী-স্ত্রীতে কখনো ঝগড়া হয়নি। সুখের গোপন রহস্য জানতে চাইলে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল: অ্যাডজাস্টমেন্টরে ভাই অ্যাডজাস্টমেন্ট। আমরা সবাই সুখী হতে চাই। ভাইকে চেপে ধরলাম। কী অ্যাডজাস্টমেন্ট। কিভাবে করলেন, আমাদের শেখান। একদিন আপনি মশারি টানান আরেকদিন ভাবী? বড় ভাই বললেন: আসলে আমরা খুবই হেল্পফুল। আমি তার রান্নার কাজে হেল্প করি, সে আমার কাপড় ধোয়ায় হেল্প করে।
পাশ থেকে এক বন্ধু প্রশ্ন করল: তাহলে মশারি টানানো? এটা কে করে? ভাই উদাস গলায় বললেন: এটা সবসময় পুরুষদেরই করতে হয়।
এক বড় ভাইকে চিনি। কখনো মশারি টানাতেন না। বাড়ি থাকতে মা টাঙিয়ে দিতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে উঠে নিয়মিত রক্তদান শুরু করলেন। না করে উপায় আছে? মশারি টানাতে ইচ্ছে করে না। মা নেই যে টানিয়ে দেবেন। মশা বেশি রক্ত খেলে কয়েল কিংবা পিপিলেন্টে সমাধান খোঁজেন।
সেই ভাই বিয়ের পর শুনলেন ভাবী মশারি ছাড়া ঘুমাতে পারেন না। বড়ভাইয়ের মশারি কে টানিয়ে দিতো এই প্রশ্ন করার আর সাহস পাইনি। তবে সেই বড়ভাই সন্তানের জন্য পরম ভালোবাসায় মশারি টানানোর ঘটনা গর্ব করে বলে বেড়াতেন। তখন বুঝেছি স্ত্রীর জন্য মশারি টানানো যতটাই ‘লজ্জা’র সন্তানের জন্য মশারি টাঙ্গানো ততটাই ভালোবাসার।
মশারি পুরুষদের কেন টানাতে হয় এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তারপরও এক ভদ্রলোককে প্রশ্ন করেছিলাম। উত্তরে বললেন: তুমি কি জানো মানুষের রক্ত খায় শুধু মাত্র স্ত্রী মশা? এক স্ত্রীর (মশা) হাত থেকে পুরুষকে আরেক স্ত্রী (ঘরের স্ত্রী) কেন রক্ষা করবে? স্ত্রীদের হাত থেকে সুরক্ষার উপায় তাই পুরুষদেরই অবলম্বন করতে হয়।
তবে কবে থেকে মশারি টানানোর প্রথা পুরুষদের ঘাড়ে চাপানো হলো তা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। একজন বলল, এক লোক স্ত্রীর সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করছে। সে একাই কেন মশারি টানাবে। এই নিয়ে চুক্তি হওয়া উচিৎ। স্ত্রী অনেক ভেবেচিন্তে চুক্তি পত্র তৈরি করলেন। তাতে লেখা ছিল: একদিন তুমি মশারি টানাবে আমি ঘুমাব, পরেরদিন আমি ঘুমাব তুমি মশারি টানাবে। সেই থেকে শুরু। একদিন স্বামী মশারি টানায় স্ত্রী ঘুমায়, অন্যদিন স্ত্রী ঘুমায় স্বামী মশারি টাঙ্গায়।
মশারি চার কোণা কেন হয়, প্রশ্নের উত্তরে অবিবাহিত সেই বড়ভাই বলেছিলেন: মশারির কোণা জোড় সংখ্যায় হয়। যাতে দুই কোণ স্বামী, আর বাকি দুই কোণ স্ত্রী টানাতে পারে।
এই বাণী দেওয়ার কিছুদিন পর বড়ভাই বিয়ে করেন। বিয়ের পর একদিন দেখা। জানতে চাইলাম, ভাই খবর কী? তিনি বললেন: জীবনে যা শিখলাম সব ভুলরে। মশারির চারটা কেন, চারশ’ কোণ হলেও তা স্বামীকেই টানাতে হতো।
আমি বললাম, তার মানে মশারি আপনাকে টানাতে হয়? এ তো অন্যায়। এমন অন্যায় মেনে নিলেন? ভাই বললেন: শুরুতে মানিনি। নালিশ নিয়ে আব্বুর কাছে গিয়েছিলাম। দরজার বাইরে থেকে আব্বুকে বললাম: একটু বাইরে আসো। জরুরি কথা আছে। আব্বু বললেন: তুমি সোফায় বসো, মশারিটা টানিয়েই আসছি।