বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী নাজমুন নাহার যুক্তরাষ্ট্রে অর্জন করলেন আন্তর্জাতিক ‘পিস টর্চ অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘ডটার অব দ্য আর্থ’ উপাধি।
নাজমুন নাহারকে গত ২৭ অক্টোবর নিউইয়র্ক সময় দুপুর তিনটায় নিউইয়র্কের বিশ্ব শান্তির দূত নামে খ্যাত কুইন্সের ‘শ্রী চিন্ময় ওয়াননেস হার্ট সেন্টারের এসপিরেশন গ্রাউন্ড’-এ দেয়া হয় “পিস টর্চ অ্যাওয়ার্ড” ও ‘ডটার অব দ্য আর্থ’ উপাধি।
এসময় নিউ ইয়র্কে শ্রীচিন্ময় সেন্টারের এস্পিরেশন গ্রাউন্ডে নাজমুন নাহারের সাথে সাক্ষাৎ করেন বর্তমান শ্রী চিন্ময় সেন্টারের প্রধান রঞ্জনা ঘোষ।
সেখানে নাজমুন নাহার পৃথিবীর দেশে দেশে বাংলাদেশের লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে ঘুরবার দুর্লভ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। পরে শ্রী চিন্ময় সেন্টারের ‘ওয়াননেস হার্ট সেন্টারে’র পরিচালক ড. মহাতপা পালিতের নেতৃত্বে নাজমুন নাহারের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে আরেক বিশ্বখ্যাত ক্রীড়াবিদ, শ্রী চিন্ময় সেন্টারের ৩১০০ মাইল দৌড় বিজয়ী, নিউজিল্যান্ডের কন্যা মিস হরিতা, নাজমুন নাহারকে ‘পিস টর্চ অ্যাওয়ার্ড পরিয়ে দেন।
এসময় বাংলাদেশের পতাকা স্পর্শ করে বাংলাদেশকে সম্মান জানান শ্রী চিন্ময় সেন্টারের প্রধান এবং ওয়াননেস হার্ট সেন্টারের সদস্যবৃন্দ। ইতিপূর্বে এই সম্মানিত পুরস্কার পেয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক ও মানব জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করা মাদার তেরেসার মতো মহামনীষীরা।
বিশ্বখ্যাত ধ্যান সাধক শ্রী চিন্ময় যেমন বিনামূল্যে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বের ৫ টি মহাদেশে ৭০০ টি ‘পিস কনসার্ট’ পরিবেশন করেছিলেন, বিশ্বব্যাপী তাঁর সাহিত্য, সংগীত এবং চিত্রকলার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও মানবতার বাণী পৌঁছে দিয়েছেন, তেমনি বাংলাদেশের মেয়ে নাজমুনও বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্ব শান্তি, নারীর সমতা ও ক্ষমতায়নসহ সব জাতি ধর্ম বর্ণের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে দেশে দেশে বিগত ১৯ বছর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
নাজমুন নাহার ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের পতাকা হাতে ঘুরে ফেলেছেন পৃথিবীর ১৩৫ টি দেশ।
নাজমুন নাহার পৃথিবীর প্রতিটা দেশে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকার মাধ্যমে বাংলাদেশেকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর আনাচে কানাচে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন- ‘ওয়াননেস ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি’ অর্থাৎ ‘এক পৃথিবী- এক পরিবার’ এর বার্তা। এই প্রত্যয়ী নারী নাজমুন নাহার সর্বাধিক রাষ্ট্র ভ্রমণকারী প্রথম বাংলাদেশি।
উল্লেখ্য বিশ্ব শান্তি ও মানবতার প্রতীক শ্রী চিন্ময় প্রবর্তিত প্রথম ‘পিস টর্চ বিয়ারার’ পুরস্কারটি নয় বারের অলিম্পিক স্বর্ণপদক এবং পিস রানের মুখপাত্র কার্ল লুইসকে দেওয়া হয়েছিল।
তার পর থেকে মিখাইল গর্বাচেভ, নেলসন ম্যান্ডেলা, মায়া অ্যাঞ্জেলোসহ বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তিরা পেয়েছেন।
এছাড়াও পিস টর্চ অ্যাওয়ার্ডটি স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রপতি ড: ড্যানিলো টার্কে, তিমুর লেস্টের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডা. মারি অ্যালকাতিরি, নিউইয়র্কের সংগীতজ্ঞ ফিলান্ট্রোপিস্ট এবং হিপ-হপ অগ্রগামী রাসেল সিমন্স, আমেরিকার ইতিহাসের সর্বাধিক জনপ্রিয় দূরত্বের দৌড়বিদ মেব কেফলেজিঘি এবং অন্যান্যদের জন্য প্রদান করা হয়েছে যারা অন্যের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
বিশ্ব শান্তি ও মানবতার প্রতীক ছিলেন শ্রী চিন্ময়। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় ১৯৩১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন সাধক শ্রী চিন্ময়। পাশ্চাত্যের অকৃত্রিম সাধকদের সাথে তাঁর আধ্যাত্মিক জ্ঞান ভাগ করবার জন্যে ১৯৬৪ সালে নিউইয়র্কে পাড়ি দেন তিনি।
শ্রী চিন্ময় এর জীবন ছিল সীমাহীন সৃজনশীলতায় সমৃদ্ধ। সংগীত, কাব্য, চিত্রকলা, সাহিত্য এবং ক্রীড়ার মত জ্ঞান ও কর্মে বিস্তৃত সব ক্ষেত্রে তিনি বিপুল সৃষ্টির স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শ্রী চিন্ময় মানুষের অসীম সৃজনী শক্তিতে বিশ্বাস করতেন। তিনি তের হাজার বাংলা ও আট হাজার ইংরেজি গান রচনা করেছেন। হাজার হাজার ছবি এঁকেছেন। শ্রী চিন্ময় ১৯৭০ সাল থেকে ২০০৭ এ পরলোক গমনের আগে পর্যন্ত জাতিসংঘের সদর দপ্তরে পিস মেডিটেশন এর নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বিশ্বজয়ী নাজমুন নাহার বর্তমানে যাত্রাবিরতিতে অবস্থান করছেন আমেরিকার নিউইয়র্কে। তিনি ইতিমধ্যে কোটি -কোটি মানুষের হৃদয়ে সাড়া জাগিয়েছেন! শুধু তাই নয় পৃথিবীব্যাপী তিনি পেয়েছেন ব্যাপক পরিচিতি। বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি নিউইয়র্কে পেলেন ‘পিস টর্চ আওয়ার্ড’, এর আগে নিউ ইয়র্কের নাসাউ কলোসিয়ামের ফোবানা সম্মেলনে নাজমুনকে সম্মানিত করা হয়েছিল ‘মিস আর্থ কুইন অ্যাওয়ার্ড’ ও ইয়ুথ কনফারেন্সে ‘গ্লোব অ্যাওয়ার্ড’ দিয়ে।
এ ছাড়া এ বছর তিনি পেয়েছেন অনন্যা অ্যাওয়ার্ড, অতীশ দীপঙ্কর গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড, জন্টা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, রেড ক্রিসেন্ট, মোটিভেশনাল অ্যাওয়ার্ড। তিনি শিরোনাম হয়েছেন দেশি-বিদেশি বহু গণমাধ্যমের, তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক তথ্যচিত্র, ভিডিও ডকুমেন্টারি।
তিনি কেবল বাংলাদেশের পতাকা বুকে নিয়ে বিভোর নতুন নতুন সীমানা জয়ের স্বপ্নপূরণে। তাঁর একটাই স্বপ্ন পৃথিবীর প্রতিটা দেশে তার এই লাল সবুজের পতাকা উড়ানো।”
২০০০ সালে প্রথম ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এর মাধ্যমে নাজমুন নাহারের প্রথম অভিযাত্রা শুরু হয়। পাঁচবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন নাজমুন নাহার। লাল সবুজের পতাকা হাতে একা পাড়ি দিয়েছেন সড়কপথে ১৩৫ টি দেশের সীমানা।
ইতিমধ্যে ১৩৫ তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেন কোস্টারিকা। সকল দুর্গম কঠিন দুয়ার ভেঙে-ভেঙে নাজমুন স্বদেশের পতাকা হাতে ১৩৫ টি দেশ ভ্রমণ করার রেকর্ড অর্জন করেন। তার পজিটিভ চিন্তা, বিনয়, মেধা, মনন, জীবন দর্শন আজ তাকে এতদূর নিয়ে এসেছে।
নাজমুন নাহারের জন্ম বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুরে। জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসাহ ছিল বাবা, দাদা ও বই। তার দাদা ছিলেন একজন ইসলামিক স্কলার ও ভ্রমণকারী।
নাজমুন নাহার পড়াশোনা করেছেন সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে। নাজমুন নাহার মাকে নিয়েও ঘুরেছেন পৃথিবীর ১৪ টি দেশ। তার হাতে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা, পিছনে ব্যাকপ্যাক, দু’পায়ে বজ্রের গতি, হৃদয় তার বাংলাদেশ, মুখে তার বিশ্বশান্তির বার্তা নিয়ে পৃথিবীব্যাপী মহাপর্বত, মহাপ্রলয়, মহাসমুদ্রের বাধা, নগর- বন্দর-শহরের দীর্ঘপথ আর সীমান্তের বাধা অতিক্রম করে অব্যাহত থাকুক তার এই অভিযাত্রা পৃথিবীর প্রতিটি দেশে।