গাইবান্ধা-১ আসন, সংসদীয় এলাকাটির মধ্যে পড়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। শরতের ভোরটাও ছিলো সুন্দরগঞ্জ নামটার মতোই অতি মিষ্টি। হঠাৎ করেই পিস্তল হাতে নেমে এলো একটা অসুর। সেই অসুরে ঝরলো শিশুর রক্ত। হ্যাঁ গাইবান্ধার এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের কথাই বলছি। মিস্টার লিটন জনপ্রতিনিধি। অন্তত কেউ যখন তার নামের আগে কোনো সম্বোধন যোগ করবেন তাহলে জনপ্রতিনিধি শব্দটাই লিখবেন, জনহন্তারক নয়।
লিটন সাহেবের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বেশ দীর্ঘ বলেই জেনেছি। তবে তা সুরাজনীতি বলে মনে হয় না। দস্যুতার জন্য খ্যাতি তার আগে থেকেই। তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট পেটানোসহ আরো অনেক অভিযোগ আছে। এই এমপি সাহেবের নাকি সব কিছুই উল্টাপাল্টা। উনি রাতে জাগেন। পাজেরো নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান এলাকা। আর দিনে পড়ে পড়ে ঘুমান। তার এলাকার ভোটার এমনকি দলীয় কর্মীদের অভিযোগ এমপি লিটন নেশাগ্রস্ত। তিনি নেশাগ্রস্ত থাকতেই পারেন। তবে এজন্য তিনি নিশ্চয় তার কর্মকাণ্ডে অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন না।
লিটনের মতো আরো বেশ কিছু সিটিং এমপির আচরণগত সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন সময় সংবাদের শিরোনামও হয়েছেন তারা। এসব তথাকথিত আচরণ ত্রুটিযুক্ত এমপিরা ভুলে যান যে তারা এমপি হয়েছেন কেনো এবং কিভাবে। সরকারের অর্জন এলাকার জনগণের সামনে তুলে ধরতেই আপনাকে এমপি বানানো হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকরে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতেই আপনাদের এমপি বানানো হয়েছে। নেহায়েৎ আইন তৈরির জন্য নয়। আবার বর্তমান সংসদে কয়জন এমপি সংসদীয় রাজনীতি চর্চায় আগ্রহী সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে সরকার ও দলের রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে কি এমপিরা হাঁটছেন? অবশ্যই না।
লিটনের মতো কিছু কিছু এমপি সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর অর্জনকে ধুলিস্মাৎ করার টার্গেটে একটার পর একটা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ পুরস্কার নিয়ে দেশে ফিরছেন, এ অর্জনের জন্য আওয়ামী লীগ যখন প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে; তখনই লোপ পেলো পিস্তল লিটনের কাণ্ডজ্ঞান। এসব মূর্খ কি দলের মধ্যে থেকে দলের ও সরকারের ক্ষতি করার মিশন নিয়ে জেনে বুঝেই এসব করছে? নিশ্চয় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড ভাবনায় রাখবেন।
সরকারের ভাবমূর্তি নাকি ছাত্রলীগ ধ্বংস করছে। এরকম একটা প্রপাগান্ডা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবেই হয়। কিছু কিছু পত্রিকাও সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠটিকে মোটামুটি সমালোচনার টার্গেট বানিয়েছে। একবারও কি কেউ ভেবে দেখেছেন স্থানীয়ভাবে ছাত্রলীগ যা করছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় এমপির নির্দেশই! ছাত্রলীগের জেলা, থানা, পৌরসভা এমনকি ওয়ার্ড কমিটিগুলো করা হয় এমপিদের সুপারিশেই। কমিটিগুলো করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা এক্ষেত্রে খুবই সীমিত। তবে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক চাইলেই যে পারেন না, তাও ঠিক না। এমপি বা বড় নেতাদের সঙ্গে যাতে ছাত্রলীগের দূরত্ব তৈরি না হয় সেজন্য কমিটি করার ব্যাপারে এই নীতিই মানে ছাত্রলীগ। এই সুযোগে ছাত্রলীগকেই ব্যবহার করছেন এসব এমপি। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির ঢালাও অভিযোগগুলো মোটেও ঠিক না। একটু অনুসন্ধান করলেই তা বেরিয়ে আসবে। বেশিরভাগক্ষেত্রে এসব কিছুর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তথাকথিত এসব কাণ্ডজ্ঞানহীন এমপিরাই দায়ী।
গুলিবিদ্ধ শিশু সৌরভের মা প্রশ্ন করেছেন এমপিকে ভোট দিছি কি গুলি করার জন্য? এমপি লিটনের বিচার দাবি করেছে এলাকাবাসী। বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই এর বিচার করবেন। লিটন আজ আওয়ামী লীগে আছে বলেই নামের আগে এমপি , আওয়ামী লীগ না রাখলে নাম চেঞ্জ হয়ে “পিস্তল লিটন” হতেও পারেন।
লিটনের বিচার না হলে তার মতোই আচরণে ত্রুটিযুক্ত অন্য এমপিরাও জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সকল অর্জনকে ম্লান করে দেবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সরকারের ভাবমূর্তিতে প্রশ্নবোধক চিহ্ণ বসিয়ে দেবে। তাই এসব লিটন দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের ক্ষতির চেয়ে লাভই বেশি।