আসামির সংখ্যার দিক থেকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা হিসেবে পরিচিত পিলখানা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিচারপতি মো. শওকত হোসেন এবং বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন।
বুধবার এই তিন বিচারপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ সে রায় প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে এ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেয়া হবে।
এর আগে হাইকোর্ট তার রায়ে পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেন। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ১৮৫ জনকে। আর ২০০ জনকে দেয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। এছাড়া হাইকোর্ট তার রায়ে এই হত্যা মামলা থেকে ৪৫ জনকে খালাস দেন।
এক দশক আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরে গুলির শব্দ শোনা যেতে থাকে। বিডিআর সপ্তাহ চলার কারণে প্রথমে অনেকেই ভাবছিলেন ভেতরে হয়ত কোনো কর্মসূচি চলছে। কিন্তু পরে জানা যায় ভেতরে বিদ্রোহ হয়েছে এবং পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জওয়ানরা। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলায় বিডিআর দপ্তরে বিদ্রোহের খবর পাওয়া যায়।
একপর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনা হয়। এরপর গভীর রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পিলখানায় গেলে বিদ্রোহীরা তার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেরিয়ে আসার সময় বিদ্রোহীদের হাতে জিম্মি কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন।
একপর্যায়ে পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও সেনাবাহিনী পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নেয়। অবসান ঘটে প্রায় ৩৩ ঘণ্টার বিদ্রোহের। তবে বিদ্রোহের প্রথম দিন দুপুরে কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধের কাছে ম্যানহোলের মুখে দুই বিডিআর কর্মকর্তার লাশ পাওয়া যায়। আর বিদ্রোহ অবসানের পরদিন পিলখানায় পাওয়া যায় একাধিক গণকবর। সেখানে পাওয়া যায় বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, তার স্ত্রীসহ সেনা কর্মকর্তাদের লাশ। রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এর নাম বদলে এই বাহিনী নাম দেয়া হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ওই বিদ্রোহের ঘটনার পর ৫৭টি বিদ্রোহের মামলার বিচার হয় বাহিনীর নিজস্ব আদালতে। সেখানে ছয় হাজার জওয়ানের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু পরে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের মামলার বিচার শুরু হয় ঢাকার বিচারিক আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এই হত্যা মামলায় ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এছাড়া সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয় ২৫৬ জনকে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন। পরবর্তীতে বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয় ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। ৩৭০ কার্যদিবস শুনানির পর ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।