আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ৬ নভেম্বর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, পিপলস লিজিংয়ের প্রায় ছয় হাজার আমানতকারীর সঞ্চয় ফেরত প্রদানে নির্দেশক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করা হলো।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: চিঠি দিয়েছে ভালো কথা। কিন্তু যেহেতু এটা নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে।
তাই আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে একটা প্রশ্ন থেকে যায়। আদালত যে নির্দেশনা দেবেন সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে। অতএব আদালতের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করা লাগবে।
তিনি বলেন: এখানে অনেক আমানতকারী রয়েছেন। সবাইকে হয়তো একসাথে টাকা দেয়া যাবে না। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টাকা দেয়া হতে পারে। সেটাও আদালতের নির্দেশেই হবে।
নানা সংকটে পড়ায় পিপলস লিজিংকে অবসায়নের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৪ জুলাই পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ন চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদন গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। বর্তমানে অবসায়ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আদালতের নির্দেশনার আলোকে বহির্নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পিপলস লিজিংয়ের সম্পদের মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে। ২০১৫ সালের অক্টোবর প্রান্তিক থেকে গত ১৪ জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ঋণ, আমানত, স্থায়ী সম্পদসহ সার্বিক দায়দেনা মূল্যায়ন করবে একনাবিন। অবসায়নের মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার পর আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
জানা গেছে, পিপলস লিজিংয়ের প্রায় ছয় হাজার আমানতকারী রয়েছেন। তারা আমানতের টাকা ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হন। তাদের অর্থ ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়ে গত ১০ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি কারণে চরম সংকটে থাকা পিপলস লিজিংকে অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সেসময় তারা বলেছিলেন, পিপলস লিজিংয়ের আমানতের চেয়ে সম্পদের পরিমাণ বেশি রয়েছে। অতএব আমানতকারীদের কোনো সমস্যা হবে না। তারা টাকা ফেরত পাবেন।
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের আশ্বস্তের চার মাস পার হলেও অর্থ ফেরত পাননি আমানতকারীরা। তাই গত ৪ নভেম্বর ‘পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিতে আমানতকারীদের কাউন্সিল’ এর ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আগারগাঁওয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অর্থ ফেরতের বিষয়ে সহায়তা চান। সাক্ষাৎ শেষে তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, অর্থমন্ত্রী আমানতকারীদের টাকা দ্রুত ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে তাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
ওইদিন অর্থমন্ত্রী নিজেও সাংবাদিকদের বলেছেন, টাকা ফেরতের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এরপর গত ৯ নভেম্বর গুলশানের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সহায়তা চেয়েছেন পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীরা।
সেসময় পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসকে অবসায়ন না করে পুনর্গঠন অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে ব্যক্তি আমানতকারীদের সঞ্চয় ফেরত দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।