আমরা যারা মধ্যবিত্ত তাদের সাধ-আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় করতে হিমশিম খেতে হয়। না হলে বাড়ির এতো কাছে দার্জিলিং যেতে পাঁচ বছর ধরে পরিকল্পনা করতে হয়? অনেকবার উদ্যোগ নিয়েও যাওয়া হয়নি। ছুটি জোটে তো টাকা থাকে না। আবার টাকা থাকে তো ছুটি মেলে না। তো অনেক ঝক্কি-ঝামেলা উপেক্ষা করে এবার পূজার ছুটিতে গিয়েছিলাম দার্জিলিং।
১২ অক্টোবর আমার বউ ববিসহ নাইট কোচে প্রথমে পঞ্চগড় যাই। সেখানে বাড়িতে স্নান-খাওয়া সেড়ে একটা মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে সোজা তেঁতুলিয়া হয়ে উত্তরের শেষ প্রান্ত বাংলাবান্ধা। আমার বাড়ি থেকে বাংলাবান্ধা সোয়া এক ঘণ্টার পথ। এই স্থলবন্দরটিকে বলা হয় ফুলবাড়ী। বছর দুই আগে এই স্থলবন্দরটি চালু হয়েছে। সীমান্তের এপারে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, আর ওপারে ফুলবাড়ী। ফুলবাড়ী স্থল বন্দর ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এটি ভারতের একমাত্র স্থলবন্দর যার মাধ্যমে চারটি দেশের (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান) মধ্যে পণ্য আদান-প্রদানের সুবিধা রয়েছে। এই ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যতো সহজে চারটি দেশ ভ্রমণ করা যায় দেশের অন্য চেকপোস্টগুলো দিয়ে তা সম্ভব নয়। কারণ বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী স্থলবন্দর থেকে ভারতের শিলিগুড়ি শহর মাত্র ৬ কিলোমিটার। জলপাইগুড়ি শহর ১০ কিলোমিটার, দার্জিলিং ৫৮ কিলোমিটার, নেপালের কাকরভিটা ৬১ কিলোমিটার, ভুটানের ফুন্টসিলিং শহর মাত্র ৬৮ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টারের একমাত্র প্রবেশ পথ। আমরা দুপুর দেড়টায় ইমিগ্রেশনের কাজ শুরু করে আড়াইটার মধ্যে ওপারে পৌঁছে যাই। ওপারে আমাদের জন্য একটি ছোট সাইজের মাইক্রো নিয়ে অপেক্ষা করছিল আমার ভাগ্নে শিশির। শিশির ভারতের নাগরিক। ওরা ছোটকালেই স্থায়ীভাবে ওপারে চলে যায়। শিশির একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে। ও আমাদের সঙ্গে গাইড কাম ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে যোগ দেয়। ওপারে গিয়ে প্রথমেই আমরা টাকা ভাঙ্গিয়ে নেই। টাকার দাম এখন বেশ ভালো। আমরা ১০০ টাকার বিনিময়ে ৮৬ রুপি পাই। যতদূর মনে পড়ে, আমি যখন ২০০৭ সালে প্রথম ভারত ভ্রমণে যাই, তখন ১০০ টাকার বিপরীতে মাত্র ৪৭ রুপি পেয়েছিলাম!
যাহোক, আমরা প্রধান সড়ক ধরে শিববাড়ী নামক স্থানে যাই। সেখান থেকে একটি ভাঙ্গা-চোরা রাস্তা দিয়ে সিসাবাড়ি বাজার পৌঁছাই। সেখানেই আমার বোনের বাসা। এই রাস্তাটুকু পেরোতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। আমরা বোনের বাড়িতেই রাত কাটাই। পরদিন সকালে আমি, ববি আর শিশির রওনা হই দার্জিলিংয়ের উদ্দেশ্যে। সিসাবাড়ি থেকে আমরা প্রথমে অটোতে যাই শিববাড়ী। সেখান থেকে জিপে শিলিগুড়ি মোড়। শিলিগুড়ি মোড়ে সাড়িবদ্ধ জিপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি, যেগুলোর গন্তব্য দার্জিলিং। তারই একটাতে আমরা চেপে বসি। এই জিপগুলোতে দার্জিলিংয়ের ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। এখানে বলে রাখা ভালো যে, ফুলবাড়ি সীমান্ত থেকে সরাসরি শিলিগুড়ি মোড় পৌঁছাতেও (দূরত্ব প্রায় ১১ কি.মি.) জনপ্রতি ৪০-৫০ টাকার মতো ব্যয় হয়।
পঞ্চগড়ের মানুষের কাছে দার্জিলিং যেন পাশের গাঁ। পঞ্চগড়ের সীমান্ত পার হলেই জলপাইগুড়ি। আর জলপাইগুড়ির পরই দার্জিলিং। এক সময় মানুষ হানিমুন করতে দার্জিলিং যেত। এখনও সস্তায় ফ্যামিলি ট্যুরের জন্য অনেকেরই প্রিয় জায়গা দার্জিলিং। ছোটকাল থেকেই দার্জিলিংয়ের নাম শুনে আসছি। বইয়ে পড়েছি, সিনেমায় দেখেছি। বাস্তবে কেমন লাগবে এটা নিয়ে অনেক কৌতূহল ছিল। দার্জিলিংয়ের উচ্চতা আর শীতের কথাও অনেক শুনেছি। এবার সত্যি সত্যি দার্জিলিং যাচ্ছি, ভাবতেই কেমন রোমাঞ্চ অনুভব করছিলাম।
এক সময় জিপ চলতে শুরু করে। কিছুদূর পরেই একটা সেনানিবাস চোখে পড়ে। স্থানটির নাম শুকনা। ভেজার বিপরীত শব্দ হিসেবেই শুকনা শব্দটি এসেছে কি না কে জানে। শুকনা পার হয়ে আমাদের গাড়ি এগোতে থাকে আর ক্রমেই উপরে উঠতে থাকে। মাঝে মাঝে বিপজ্জনক সব বাঁক। আমরা নিঃশব্দে চারদিকের দৃশ্য গিলতে থাকি। এর মধ্যে রাস্তার পাশে একটি হোটেলে আমাদের গাড়ির চালক ১৫ মিনিটের জন্য যাত্রা বিরতি ঘোষণা করে। আমরা ওই হোটেলে গরম এবং অতি সুস্বাদু স্টিম চিকেন মোমো আর লাল চা খাই। এরপর আবার শুরু হলো যাত্রা। এখন পুরোটাই খাড়া পাহাড়ি পথ। উপরের দিকে উঠছি তো উঠছিই। উঠার কোনো শেষ নেই। পাহাড়ের গা ঘেঁষে রাস্তা। চালক যে খুবই পাকা সেটা তার চালানো দেখেই বুঝলাম। পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা পথেও সে উড়িয়ে চালাচ্ছে।
শিলিগুড়ি মোড় থেকে দার্জিলিং যাবার পথটি যথারীতি অন্যান্য পাহাড়ি পথের মতই আঁকা-বাঁকা এবং সুন্দর। তবে আমরা যতই এগোতে থাকি রাস্তায় মানুষের বসতির সংখ্যাও বেশি চোখে পড়তে থাকে। বুঝলাম এখানকার মানুষ অনেক বেশি দার্জিলিং কেন্দ্রীক। দার্জিলিং শহরের কয়েক কিলোমিটার আগে ‘ঘুম’ জায়গাটির অবস্থান। ঘুম নিয়ে আমাদের মধ্যে আগ্রহের কমতি ছিল না। দুনিয়া বিখ্যাত দার্জিলিংয়ের ‘টয় ট্রেন’ ঘুম থেকে দার্জিলিংয়ের মাধ্যেই চলাচল করে। এই স্টেশনটি ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত। ইংরেজ আমলে এটা পৃথিবীর উচ্চতম স্টেশন ও রেলপথ ছিলো। বর্তমানে এই টয় ট্রেনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করেছে। এটি ৭ হাজার ২শ ১৮ ফুট উচ্চতার একটি রেল স্টেশন। কিন্তু সময়ের অভাবে আমরা ঘুমে নামতে পারলাম না। গাড়ি চলছে। মাঝে-মাঝেই কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে পথ-ঘাট। একে তো পাহাড়ি পথ তার উপর কুয়াশা আবার তারও উপর গাড়ি ওভারটেক ভয়ে আমার দম বন্ধ হবার যোগাড়। খাড়া পাহাড়ের শহর দার্জিলিং। নিচে মেঘের ভেলা ভেসে চলছে আর আমরা ক্রমশ উপরে উঠছি। অপূর্ব সব দৃশ্য। প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি। যে দিকে তাকাই চোখ ফেরানো দায়! দার্জিলিং যে পুরোটাই পাহাড়ের শহর সেটা আগে জানা ছিলো না। সমতল থেকে পাহাড়ের বাঁক ঘুরে ঘুরে প্রায় তিন ঘণ্টা পর দার্জিলিং সদরে এসে পৌঁছালাম।
স্বপ্নের দার্জিলিং! মনে হচ্ছে পৃথিবীর মাটি ছেড়ে আসমানে উঠে এসেছি।
দার্জিলিং শহরে প্রবেশ করতেই আমরা খুব অবাক হলাম শহরের গাড়ির সংখ্যা দেখে। ডানে পাহাড় আর বামে পাহাড়ের ঢাল ঘেঁষে অসংখ্য বাড়িঘর। রাস্তাটি বেশ সরু। এতোদিন আমার কল্পনায় দার্জিলিং ছিলো বেশ চুপচাপ একটি শহর, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো প্রচুর মানুষ ও গাড়ি দিয়ে ঠাসা শহর এই দার্জিলিং। পিঁপড়ের সাড়ির মতো ছোট ছোট গাড়ি। কিন্তু টের পাওয়া যায় না। কঠোর ট্রাফিক আইন। মূল সড়কে কোনো গাড়িকে দাঁড়াতে দেওয়া হয় না।
যাহোক, আমরা দুপুর আড়াইটায় দার্জিলিং মূল শহরে পৌঁছালাম। সেখানে পৌঁছেই একজন মধ্যস্থকারীর সহায়তায় ‘সেন্টার পয়েন্ট’ নামক হোটেলে উঠলাম। দুপুর, রাত এবং পরদিন সকালের নাস্তাসহ দুই রুমের মোট ভাড়া তিন হাজার রুপিতে রফা করলাম। রুমে গিজার এবং ওয়াই-ফাই সুবিধা আছে। হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়েই আমরা বেরিয়ে পড়লাম। এর আগে হোটেল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় একটি গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। দুদিনে মোট ৭টি স্পট দেখাবে। মোট ভাড়া ৩০০০ রুপি।
হোটেল থেকে আমরা প্রথমে যাই পিস প্যাগোডা। বৌদ্ধ উপাসনালয়। উঁচু-নিচু পাহাড় বেয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই শান্তির উপাসনালয়ে হাজির। পিস প্যাগোডার প্রবেশ পথটা সুন্দর। চারদিক নীরব। শান্তি শান্তি ভাব। অনেকটা বাংলাদেশের নেত্রকোনার সুসং দূর্গাপুরের রানিক্ষ্যং চার্চের মতো। যার পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সোমেশ্বরী নদী। এখানে অবশ্য কোনো নদী নেই। নেই আশেপাশেও। তবে প্যাগোডায় প্রবেশের প্রথম ভবনটা আমার কাছে রানিক্ষ্যং এর প্রথম ভবনের মতো মনে হলো। ছোট্ট দোতলা ভবন। পরিপাটি। সামনে কিছু শোভা গাছ। দুটি সিংহের মূর্তি। উপরে পিংক কালার। মূল ভবন সাদা। প্রশাসনিক ভবন এটি। এর ডান পাশে ছোট্ট একটি ফুলের বাগান। ছোট-বড় নানান জাতের ফুল ফুটে আছে। পিস প্যাগোডার ডাক নাম জাপানি টেম্পল। এই মন্দিরটি জাপানি সাধুর অর্থায়নে তৈরি বলেই হয়তো এই নাম। ১৯৯২ সালে এটার নির্মাণ কাজ শেষ হয়। মন্দিরটির উচ্চতা ২৮.৫ মিটার বা ৯৪ ফুট। চওড়ায় ২৩ মিটার বা ৭৫ ফুট। পিস প্যাগোডায় পৌঁছে মনটা ভালো হয়ে গেলো সবার। পুরো ক্যাম্পাসটা এত্তো সুন্দর। বড় বড় পাইনগাছে ঘেরা। অসাধারণ একটি স্থান। যদিও অনেক মানুষ ছিলো। তারপরও কেমন যেন শান্তি শান্তি ভাব।
খানিকটা দূর থেকে দেখছিলাম পিস প্যাগোডার মূল গম্বুজ। পুরোটা শান্তির রং সাদায় মোড়া। সামনের চত্বর, সিঁড়ি শ্বেত পাথরের। দার্জিলিংয়ে এসে একটা জিনিসের প্রেমে পড়ে গেছি। সেটা হলো ওই পাইন গাছ। অনেক কবির লেখাতেও এই হ্যান্ডসাম গাছটির বর্ণনা শুনেছি। ভুটানেও দেখেছি। কিন্তু দার্জিলিংয়ে এসে যেন নতুন এক অনিন্দ্যসুন্দর পাইনকে দেখতে পাচ্ছি। ওই যে শ্বেত পাথরের সিঁড়ির কথা বলেছি, এর পাশেই বয়সী পাইন গাছের সুন্দর উপস্থিতি।
সকল ধর্ম এবং গোত্রের লোকেরই এখানে প্রবেশাধিকার আছে। তবে মন্দিরের অঙ্গসজ্জা দেখে মনে হয়েছে প্রার্থনার চেয়ে টুরিস্ট স্পট হিসেবেই মন্দিরটিকে বর্তমানে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যে কেউ চাইলেই প্রার্থনা করতে পারেন। প্রার্থনার সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। ভোর সাড়ে ৪ টা থেকে ৬ টা এবং বিকেল সাড়ে ৪ টা থেকে সাড়ে ৬ টা। মন্দিরের ভেতরে ছবি তোলা যায় তবে প্রার্থনাকালীন ঘরের ভেতরের ছবি তোলা নিষেধ।
মন্দিরের পেছনে পাইনের ঘন বন। এর পেছনে শূন্যতা। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এই শূন্যতা ভেদ করে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে হিমালয় পর্বতমালা। আমাদের ভাগ্য মন্দ ছিল বিধায় হিমালয় দেখা হয়ে ওঠেনি। তবে হিমালয় থেকে ভেসে আসা শীতল বাতাস তীব্র আলিঙ্গনে বুঝিয়ে দিচ্ছিল তার সরব উপস্থিতি।
পিস প্যাগোডার চারপাশে একটা চক্কর দিলে অনেক কিছু দেখা যায়। গৌতম বুদ্ধের চার ভঙ্গিমার চারটি প্রতিমূর্তি উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম এই চারদিকে মুখ করে আছে। বুদ্ধ বসে আছেন, শুয়ে আছেন, দাঁড়িয়ে আছেন এবং ধ্যান করছেন। সূর্যের আলোয় বুদ্ধ চারপাশে সোনালী আভা বিলাচ্ছিলেন। সেই আভায় আমরা বিমোহিত এবং আপ্লুত। তবে বুদ্ধমূর্তির থেকেও আমাকে অধিক আকৃষ্ট করেছিল প্যাগোডার দেয়ালে খোদাই করা কাঠের চিত্রকর্মগুলো। বুদ্ধের গৃহত্যাগ এবং নির্বাণ লাভের চিত্র চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কাজগুলো দেখলে যে কেউই মুগ্ধ হবেন।
কিছু ছবি তুলে আমরা রওনা হলাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য-রক গার্ডেনে।
দার্জিলিংয়ের পাহাড়গুলো একটু বেশিই উঁচু। যতটা ভেবেছিলাম তারচেয়ে বেশি। ভয়ংকর সেই রাস্তা ধরে একবার উঠছিলাম, নামছিলাম, বিপদজনক বাঁক নিচ্ছিলাম। আধা ঘণ্টার রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছালাম রক গার্ডেনে। এটা শহরের উত্তর প্রান্তে। পাশের উঁচু পাহাড় থেকে নিচের রক গার্ডেন দেখতে ভারি সুন্দর। শহর থেকে এর দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। নাম থেকেই বোঝা যায় এটি প্রস্তরময় ফুলের বাগান। বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, অর্কিড, জলপ্রপাতযুক্ত সাজানো গোছানো এই বাগানটি। রক গার্ডেনের জলপ্রপাতটির পূর্ব নাম চুন্তু-সামার ফলস। উত্তরের সুউচ্চ পাহড় থেকে নেমে এসেছে ঝরনা। কলধ্বনি শোনা যাচ্ছিল দূর থেকে। পাথুরে পথ বেয়ে নেমে আসা ওই ঝরনাই স্পটটির মূল আকর্ষণ। পাশ দিয়ে বাঁধানো পথ, সিঁড়ি আর সেতু। ওসব ধরেই ওপরে উঠতে হয়। যতটা সম্ভব ওপরে চলে গিয়েছিলাম। নিচে তাকালাম। পাখির চোখে দেখছিলাম পুরো রক গার্ডেন। পরীর মতো পাখা থাকলে সোজা শা করে নিচে নেমে যেতাম। ওপরে ওঠার আগে রাস্তার দক্ষিণে একটা জায়গা দেখেছিলাম। বড় ঝরনাটার দক্ষিণ পাড়ে। অনেক নিরিবিলি। বনের ভেতরে কাঠের গুঁড়ির পড়ে থাকার মতো বসার জায়গা। ও হ্যাঁ, গার্ডেন যেহেতু; কিছু অর্কিড ফুল, লতাগুল্ম তো থাকবেই। আছে এখানেও। সেসব দেখে ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলাম। স্টিলের পাটাতন বসানো ব্রিজ পার হয়ে গেলাম অন্য পাড়ে। লাল লাল টিউলিপে সাজানো এই গার্ডেনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয় একদম উপর থেকে। পুরো রক গার্ডেনই চোখের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে সেখান থেকে।
এরপর সন্ধ্যার অন্ধকার গায়ে মেখে আমাদের হোটেলে ফিরে আসা। পাহাড়ের গা ঘেঁষে আঁকা-বাকা খাড়া রাস্তা। সামনে-পাশে-পেছনে আকাশ ছুঁয়ে আছে উঁচু-নিচু খাঁজকাটা সাদা মেঘের ধাপে। পাইন-ওক বনের গাঁয়ে সবুজ অন্ধকারের আভাস। হোটেলে ফিরতে ফিরতে কেবল মনে হলো, এমন একটি নির্জন পাহাড়ের কুটিরে যদি যদি একাকী একটা রাত কাটাতে পারতাম!
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)