টানা বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে বিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিপর্যয় আর মুঠোফোন নেটওয়ার্কের অবস্থাও খুব ভালো নয়। এমন অবস্থায় পুরো রাঙামাটি এখন যেন এক বিচ্ছিন্ন নগরী।
পাহাড় ধসের খবর সংগ্রহ করতে ঢাকা থেকে রাঙামাটি যাওয়া টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ২৪ এর সিনিয়র রিপোর্টার রামিম হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, পাহাড় ধসের পর এত বড় একটি জেলার মানুষগুলোর খুবই করুণ অবস্থা। এখানে সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। এ অবস্থায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে জীবনযাপন।
তিনি জানান, বিদ্যুৎ এবং মুঠোফোন নেটওয়ার্কের বেহাল অবস্থাই শুধু নয়, রাঙামাটি জুড়ে এখন খাবারের সংকটও চলছে। বাইরে থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আসতে পারছে না। চট্টগ্রাম-রাঙ্গুনিয়া থেকে কেউ কেউ হয়তো দুই হাতে করে তেল-চাল এসব নিয়ে আসছেন। কিন্তু তা দিয়ে প্রয়োজন মিটছে না। ফলে দেখা দিয়েছে সংকট।
‘সেই সঙ্গে রয়েছে জ্বালানি তেলের সংকট।’
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2017/06/ramim-hasan.jpg?resize=300%2C185&quality=100&ssl=1)
রামিম জানান, কোন কোন ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিছু পণ্য মজুদ করছেন, যদিও এই দুর্যোগে মজুদের মাধ্যমে কোন ধরণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করতে ব্যবসায়ীদের বারবার আহ্বান জানানো হচ্ছে। মজুদ বন্ধের জন্য বাজার মনিটরিং করা হলেও সেখানে সাধারণ মানুষকে বাড়তি দামেই পণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে।
এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আরো বেশ খানিকটা সময় লাগবে বলে মনে করছেন রামিম হাসান। তিনি বলেন, ভয়াবহ পাহাড় ধসে বিপর্যস্ত এই এলাকা ঠিক হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। কেননা সেখানে জনবল সংকটের পাশাপাশি যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে। রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে বড় কোন যন্ত্র আসতে পারছে না। ফলে কোদালই ভরসা। সেটা দিয়েই ধীরে ধীরে চলছে মাটি সরানোর কাজ।
বৃষ্টিপাতের কারণে এখনও পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়ে গেছে বলে জানান তিনি। ফলে সেই দিকেও প্রশাসনকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক পাকা বাড়ীর নিচের মাটি সরে যাওয়ায় যেকোন সময় ধসে পড়তে পারে। এই বিষয়গুলো সেখানে বড় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে।
রামিম হাসান বলেন, চলমান বৃষ্টির মধ্যে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে যেন কেউ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে না যায়। যারা আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে আছেন তাদেরকেও সেখানে আসতে বলা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও প্রচেষ্টা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এত বড় বিপর্যয় রাঙামাটি এর আগে কখনো দেখেছে বলে আমার জানা নেই।
চ্যানেল আইয়ের রাঙামাটি প্রতিনিধি মনসুর আহম্মেদ জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রীর নেতৃত্বে শুক্রবার বিকেলে রাঙামাটিতে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া শুক্রবার সকালেও একটি শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সম্প্রতি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য এলাকায় দুইদিনের অবিরাম বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসে পাঁচ সেনা সদস্যসহ দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে।
লঘুচাপের প্রভাবে রোববার থেকে সারা দেশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সোমবার থেকে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-বান্দরবানে শুরু হয় পাহাড় ধস। এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাঙামাটি জেলা। সেখানেই প্রাণ হারিয়েছেন ১১১ জন।