‘গনতান্ত্রিকভাবে এবং সর্বসম্মতিক্রমে এ এম আমিন উদ্দিন সুপ্রিম কোর্ট কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন’, এমন দাবী করে পল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন সমিতির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা।
আইনজীবী সমিতি ভবনের অডিটোরিয়ামে বুধবার দুপুরে সম্পাদক সহ ৬ জনের সংবাদ সম্মেলনের পর সভাপতির কক্ষে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করেন মুহাম্মদ শফিক উল্যা সহ কার্যনির্বাহী কমিটির এই পক্ষের ৭ জন।
এসময় লিখিত বক্তব্যে উপস্থাপন করে মুহাম্মদ শফিক উল্যা বলেন, ‘গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করার বিষয়ে গত ২ মে কার্যকরী কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু সেক্রেটারীর প্রস্তাব ও সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একদিন আমি সভাপতিত্ব করবো এবং আরেকদিন মোঃ জালাল উদ্দিন সভাপতিত্ব করবেন সেই হিসাবে গতকাল বিশেষ সাধারণ সভায় আমার সভাপতিত্ব করার কথা। কিন্তু কার্যকরী কমিটির সভায় মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন যে, আমি সিনিয়র সহ সভাপতি এটা সেটেল্ড। আমি সম্পাদকের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও গঠনতন্ত্রের ২১ এবং ২২ অনুচ্ছেদ আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নহে। অতঃপর সমিতির সদস্য এ.বি এম. শিবলী সাদেকীন এবং মিন্টু কুমার মন্ডল ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমাকে সভাপতি করার জন্য যথাক্রমে প্রস্তাব এবং সমর্থন করেন। কোষাধ্যক্ষ ড. মোঃ ইকবাল করিম, সহ-সম্পাদক মিস সাফায়াত সুলতানা রুমি, সদস্য মাহফুজুর রহমান রোমান এবং সদস্য মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ তখন হাত তুলে সমর্থন জানান। সম্পাদক মহোদয় ডিকটেশান প্রদান করে বলেন যে, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সহ-সভাপতি জনাব মুহাম্মদ শফিক উল্যা আগামী ৪ তারিখের বিশেষ সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করবেন। উক্ত ডিকটেশানের রেকর্ড আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, গতকাল বিশেষ সাধারণ সভা পরিচালনার সময় সম্পাদক সেই সিদ্ধান্তকে সম্মান না দেখিয়ে অগণতান্ত্রিক আচরণ করতে থাকেন। কোন সিদ্ধান্ত হয় নাই বলিয়া বিশেষ সাধারণ সভাকে অবহিত করেন এবং মোঃ জালাল উদ্দিনকে সভাপতি করার অপচেষ্টা করছিলেন।’
এই সংবাদ সম্মেলনে মুহাম্মদ শফিক উল্যা আরও বলেন, ‘কার্যকরী কমিটিতে এ.এম. আমিন উদ্দিনকে সভাপতি হিসাবে হাউজে প্রস্তাব করার জন্য কোষাধ্যক্ষ ড. ইকবাল করিম প্রস্তাব করেন এবং সহ-সম্পাদক সাফায়াত সুলতানা রুমি সমর্থন করেন। সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা, সদস্য মাহফুজুর রহমান, এ.বি.এম শিবলী সাদেকীন, মিন্টু কুমার মন্ডল এবং মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ হাত তুলে সমর্থন করলেও সম্পাদক রেজুলেশনে অন্তর্ভুক্ত না করিয়া দ্রুত সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। আমরা গঠনতন্ত্রের ২১.২২ এবং ১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিশেষ সাধারণ সভায় এবং হাউজে সভাপতির নাম প্রস্তাব করেছি এবং তাহা সর্ব সম্মতিক্রমে গৃহিত হয়েছে। তাছাড়া অন্য কোন পক্ষ অন্য কোন আইনজীবীর নাম সভাপতি হিসাবে প্রস্তাব করেন নাই এবং সমর্থনও করেন নাই। এমতাবস্থায় গণতান্ত্রিকভাবে এবং সর্বসম্মতিক্রমে এ. এম আমিন উদ্দিন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন।’
এর আগে বুধবার দুপুর আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সমিতির ব্যানারে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যেখনে সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: জালাল উদ্দিন, সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সহ-সম্পাদক মাহমুদ হাসান, সদস্য পারভিন কাউসার মুন্নি, এস.এম. ইফতেখার উদ্দিন মাহামুদ ও রেদওয়ান আহমেদ রানজীব উপস্থিত হন।
এই ছয়জন স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
যেখানে বলা হয়, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির (২০২১-২২) সভাপতি, সিনিয়র এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু গত ১৪ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। নব-নির্বাচিত সভাপতির মৃত্যুজনিত কারণে সমিতির সভাপতির পদ শূন্য হয়। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি পদ পূরণের বিধান রয়েছে। সে লক্ষ্যে উক্ত পদ পূরণের জন্য করণীয় ঠিক করার জন্য সমিতির কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতকাল দুপুরে সমিতির অডিটোরিয়ামে বিশেষ সাধারণ সভা আহবান করা হয়েছিল। সভাপতির অনুপস্থিতিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ জালাল উদ্দিন সভার সভাপতিত্ব করবেন এটি ছিল স্বাভাবিক। দূর্ভাগ্যজনকভাবে সমিতির অপর সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা সভাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিজেকে বিশেষ সাধারণ সভার সভাপতি হিসেবে দাবী করলে উপস্থিত আইনজীবীগণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব কে করবেন সে বিষয়টি সুরাহা করে সভা শুরু করার জন্য সম্পাদককে অনুরোধ জানান। কিন্তু সভাপতিত্ব কে করবেন সে বিষয় নিয়ে উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে মতবিরোধ হওয়ার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সভার কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। কোন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ছাড়াই সম্পাদক সভার কাজ মুলতবি ঘোষণা করেন। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, সভা মুলতবি করার পরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, সম্পাদকসহ সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করে নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতির পদ পূরণ করার। কিন্তু আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করলাম, কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা পরবর্তীতে অতি উৎসাহী হয়ে সমিতির সভাপতির কক্ষে নিজেই সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতিকে ২০২১-২২ সালের বাকী মেয়াদের জন্য সভাপতি হিসাবে ঘোষণা করেন।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই (গতকাল) বিশেষ সাধারণ সভা সম্পাদক স্থগিত করেছেন। কোন ধরনের আলোচনা কিংবা সেখানে সভাপতি পদে কোন নির্বাচন হয়নি। এছাড়া বিশেষ সাধারণ সভা আহবান করা হয়েছিল সভাপতি পদ পূরণে করণীয় নির্ধারনের জন্য, নির্বাচনের জন্য নয়। তাই এঘটনা প্রমান করে ভোট বিহীন ক্ষমতা দখলের যে, চর্চা বর্তমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীনরা চালু করেছে গতকালের ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হলো। যেটি সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসাবে কখনই আমাদের কাম্য ছিল না।’
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আরও বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। আমরা প্রতিনিয়ত গণতন্ত্র চর্চা করি। গণতান্ত্রিক চর্চার প্রক্রিয়া হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা আমাদেরকে নির্বাচিত করেছেন। সুতরাং সমিতির কার্যক্রম নির্বাচিতদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে এটিই সকলের প্রত্যাশা। কোন অনির্বাচিত ব্যক্তির মাধ্যমে সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হবে এটি কোন সদস্য প্রত্যাশা করে না। সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতির শূন্য পদ নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। সমিতির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা যে ঘোষণা দিয়েছেন এটি সমিতির গঠনতন্ত্র বিরোধী। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ সদস্যগণ আমাদেরকে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করেছেন। নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে অনির্বাচিত কোন ব্যক্তির সঙ্গে আমরা কাজ করি কিংবা সমিতি পরিচালনায় সম্পৃক্ত হই এমনটি কেউ প্রত্যাশা করে না। এ পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, ভোটারদের ভোটের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা আমাদের সিনিয়র আইনজীবী, সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকদের সাথে মত বিনিময় করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারন করবো। আমরা সিনিয়রদেরকে অনুরোধ করবো এই অচলাবস্থা নিরসনের জন্য তারাও এগিয়ে আসবেন। তারা সকলে গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে আমাদের সভাপতির পদ পূরণসহ সমিতির কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে সহায়তা করবেন।’
গত ১০ ও ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু। আর টানা দ্বিতীয়বার সম্পাদক নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। আইনজীবী সমিতির এই নির্বাচনে মোট ১৪টি পদের মধ্যে ৮টি পদে বিজয়ী হন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত প্রার্থীরা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়ী হন ৬টি পদে।
এরপর করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ এপ্রিল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মতিন খসরু। তার সভাপতির শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণে ৪ মে ”বিশেষ সাধারণ সভা” আহ্বান করা হয়। সে সভা গতকাল নাটকীয়তায় রূপ নেয়।