আজ পালিত হলো বিশ্ব পানি দিবস। মূলত সুপেয় পানির উৎস সংরক্ষণ এবং সেই পানির সঠিক ব্যবহারে বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে ১৯৯২ সালে জাতিসংঘ ২২ মার্চকে বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারপর থেকে প্রতিবছরই দিবসটি নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে। পানি দিবসের এবারে প্রতিপাদ্য ‘গ্রাউন্ড ওয়াটার: মেকিং দ্য ইনভিজিবল ভিজিবল’ বা ভূগর্ভস্থ পানি: অদৃশ্য সম্পদ, দৃশ্যমান প্রভাব’।
আমরা জানি, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ফসল উৎপাদন, সেচ ও গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজে দিন দিন ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমরা অনেকেই তেমন সচেতন নই। এমনকি এ নিয়ে ক্রমাগত সচেতন করার পরও বেশিরভাগ মানুষ চোখ বন্ধ করে আছে। আর এ কারণেই প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে ডিপ টিউবওয়েল ও শ্যালো মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে যাচ্ছে অনেকেই।
কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশে সেচের বিকল্প নেই সত্যি। কিন্তু এর বাইরেও বহুভাবে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছে। সেই আশির দশকের পর থেকে কোনো নীতিমালা ছাড়াই ডিপ টিউবওয়েল ও শ্যালো মেশিনের ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। তা নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগও আমাদের চোখে পড়েনি। বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে ভূগর্ভস্থ পানির আধার সুরক্ষায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছে। শহরের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা ব্যবহারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। পরিতাপের বিষয় এসব উদ্যোগে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। উল্টো ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা আরও বেড়েছে।
যার ফলও আমরা পাচ্ছি হাতেনাতে, ভয়ঙ্করভাবে। এরই মধ্যে দেশের অনেক স্থানে পানির স্তর নেমে গেছে। সেচের জন্যও পানি পাওয়া যাচ্ছে না সেইসব এলাকায়। অনেক জায়গায় আবার নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী গর্ভে। বহু জনপদ আবার হুমকির মুখে।
এমন পরিস্থিতিতে সঠিক পদ্ধতিতে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই আমাদের সামনে। নদীমাতৃক দেশ হলেও সুপেয় পানির জন্য আমাদের একমাত্র অবলম্বন ভূগর্ভস্থ পানির আধার। তাই যে কোনো উপায়ে তাকে রক্ষা করতেই হবে।
আমরা মনে করি, কৃত্রিম জলাধার তৈরির পাশাপাশি ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো সংরক্ষণ বা বাঁচাতে হবে। সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ডিপ টিউবওয়েল ও শ্যালো মেশিন ব্যবহার সীমিত করতে হবে। তা না হলে সুপেয় পানির জন্য আমাদের হাহাকার করতে হবে- সেই দিন হয়তো আর খুব বেশি দূরে নেই।