বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৯ হাজার ২০০ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৫২ জনের মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। এদের মধ্যে শিশু ৪০ জন।
বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্স বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে ১৯ হাজার ২০০ জন যার মধ্যে, ৫ বছরের কম বয়সী ১০ হাজার এবং ১০ বছরের কম বয়সী ৪ হাজার ৫০০ জন। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৫২টি শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। বাকি ৪ হাজার ৭০০ জন কিশোর ও বয়স্ক।
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্স বাংলাদেশের ভাসা প্রজেক্টের শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ বিশেষজ্ঞ রেহানা পারভীন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, অধিকাংশ পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে ঘটে, যখন মা বা শিশু পরিচর্যাকারী সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকে।
তিনি জানান, বাড়ি থেকে প্রায় ২০ মিটার বা ৪০ কদমের মধ্যে অবস্থিত পুকুর বা ডোবায় ৮০ শতাংশ পানিতে ডুবার ঘটনা ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু দ্রুত কমাতে হলে প্রয়োজন কিছু প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলা। এর মধ্যে যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম তাদের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। সে জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার বা দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্স বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) পরিচালক ডা. আমিনুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর এই ব্যাপকতার মূল কারণ হলো শিশুর পরিচর্যাকারীর সার্বক্ষণিক নজরদারির অভাব, বাড়ির আশেপাশে পুকুর, ডোবা ও অন্যান্য জলাধারের আধিক্য ও সচেতনতার অভাব।’
‘আমাদের দেশের গ্রাম-গঞ্জের মানুষরা ফসল আবাদে জমিতে বেড়া দিবে যাতে গরু-ছাগল ফসল নষ্ট না করে, কিন্তু বাড়ির পাশের পুকুরটি সুরক্ষিত করবে না।’
ডা. আমিনুল বলেন, ‘দেশে সিআইপিআরবি প্রথম পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে কাজ শুরু করে। সিআইপিআরবি পরিচালিত এক পরীক্ষামূলক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব শিশুরা ডে-কেয়ার সেন্টার (আঁচল) কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে তাদের পানিতে ডোবার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ কম।’
ডা. আমিনুর রহমান বলছেন, ৫ বছরের নীচের শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তত্ত্বাবধান, ৫ বছরের বেশি বয়সীদের সাঁতার শেখানো; কমিউনিটি সচেতনতা তৈরি করা ও বুদ্ধি-ভিত্তিক বিকাশ ত্বরান্বিত করা গেলে এ ধরণের দুর্ঘটনা কমে আসবে। এর মাধ্যমে প্রতিবছর পানি ডুবে মৃত্যু থেকে অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার শিশুকে বাঁচানো সম্ভব।
তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কেউ ডুবলেও তাকে উদ্ধারের পরপর তার শ্বাস ও হার্ট চালু করার যেসব প্রাথমিক উদ্যোগ আছে সেগুলো মানুষকে শেখানো।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে,পানিতে ডুবে যাওয়া শিশুকে ওপরে উঠানোর পর তাকে সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাকশেসন) পদ্ধতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। সিপিআর দেয়ার পর রোগী নিজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে শুরু করলে তাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সম্প্রতি গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’ আয়োজিত এক কর্মশালায় জানানো হয়েছে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জাতীয় পর্যায়ে একটি কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যেখানে দেশের ২৫ শতাংশ শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত যে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আলাদা করে বাজেট রাখা হয়েছে।
এসডিজি অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৫-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।