জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজন করা হয়েছে পাট পণ্যের মেলা। পাট পণ্যের মেলায় পাট নিয়ে সাফল্য ও আশার কথা শুনিয়েছেন এর উদ্যোক্তরা।
৩ দিন ব্যাপী এই মেলা চলবে আগামী ১১ মার্চ পর্যন্ত। এতে দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবেন।
‘পাটই আমার জীবন, পাটই গৌরব। পাটের বৈচিত্রম্যয় পণ্য তৈরি করতে ব্যয় করেছি ৩০ বছর। জীবনের বাকি সময়টাও এভাবে কাটুক। তবু বিশ্বে পাটকে করবো জয়।’ পাট নিয়ে এমন আবেগঘন কথা শোনান মাহবুব জুটেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল হক।
মেলায় পাট দিয়ে তৈরি চাদর, স্কুল ব্যাগ, জানালার পর্দা, ওড়না, শপিং ব্যাগসহ প্রায় ১৫-২০ ধরনের পাটের পণ্য প্রদর্শন করছেন মাহবুবুল হক। তার স্টলে দাঁড়িয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে পাটের বৈচিত্র্যময় পণ্য প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি।
১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতোকত্তোর সম্পন্ন করেন মাহবুবুল হক। এরপর ৮০’র দশকে পাটের প্রতি দূর্বলতা শুরু হয়। সেই থেকে পাটের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। নিজেই নতুন পণ্যের উদ্ভাবক। আবার নিজেই তার ডিজাইনার। পাটের এসব পণ্য শুধু দেশে নয়, বিদেশেও রপ্তানি করেন। তবে তা সরকারি পর্যায়ে নয়। প্রবাসী বাঙালিদের অর্ডারের ভিত্তিতে।
মাহবুবুল হকের মতো আর এক নারী উদ্যোক্তা স্মীতা চৌধুরী। তিনি ব্রিনতা জুট হ্যান্ডিক্রাফ্টসের মালিক।
স্মীতা চৌধুরী পাট দিয়ে তৈরি করেন নানা আইটেমের জুতা ও সভা-সেমিনারের ব্যাগ, ফাইলসহ নানা পণ্য। তিনিও ব্যক্তি উদ্যোগে মালয়শিয়া ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এসব পণ্য রপ্তানি করেন। তার অধীন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন।
এই গল্প শুধু মাহবুবুল হক আর স্মীতা চৌধুরীর নয়। এভাবেই অসংখ্য পাটের বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করছেন শত শত উদ্যোক্তা।
একসময় দেশের রপ্তানি আয়ের ৯০ শতাংশ অর্জন হতো পাট পণ্য থেকে। সেই ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি)।
পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, জেডিপিসি এরইমধ্যে ১৩৫টি ডিজাইনের বহুমুখী পাট পণ্য উদ্ভাবন করেছে। এসব ডিজাইনের পাট পণ্য দেশে ও বিদেশে সমাদৃত।
চলতি অর্থবছরে(২০১৬-১৭)রপ্তানিমুখী বিভিন্ন পণ্যে নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। বৈচিত্রকৃত পাটজাত পণ্য রপ্তানিতেও দিচ্ছে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা।
মেলায় পাট দিয়ে তৈরি জুতা, থ্রি-পিস, কানের দুল, সোফা, কলমদানি, জানালার পর্দা, ল্যাম্পশেড, টিপিন ব্যাগসহ কয়েকশ ধরনের পাটের পণ্য প্রদর্শন করছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।
তারা বলছেন, হস্তশিল্পের উদ্যোক্তারা সাধারণত ছোট পরিসরের। সহজ শর্তে ও নামমাত্র সুদে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা করলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে পরিবেশ বান্ধব এই পণ্যের বাজার। একই সঙ্গে রপ্তানি আয় হবে কোটি কোটি টাকা। বাড়বে কর্মসংস্থানও।
উদ্যোক্তা মাহবুবুল হক বলেন, নরসিংদিতে তার কারখানায় প্রায় ৩০ ধরনের পাটের পণ্য তৈরি হয়। সেখানে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সরকার উদ্যোগ নিলে তার এই ছোট কারখানাকে বৃহৎ কারখানায় রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
‘প্রয়োজনীয় সুযোগ দিলে শুধু আমার কারখানা থেকে বছরে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করা যাবে’ বললেন তিনি।
কুড়িগ্রাম থেকে পাটের তৈরি কলমদানি, গলার মালা, চুলের ক্লিপসহ নানা ধরনের পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছেন ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার মতো শত শত উদ্যোক্তা আছে। যারা পণ্য তৈরি করে এলাকায় বিক্রি করে। কিন্তু তাদের পণ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার।