জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষ, মাটি, পানি, পরিবেশের ক্ষতি হবার পাশাপাশি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পাখিরাও। পৃথিবীর উঞ্চায়নের কারণে নানা প্রজাতির পাখি আকারে ছোট হয়ে আসছে, আবার ভবনের সঙ্গে আঘাতে মারা যাচ্ছে পাখিরা।
উত্তর আমেরিকার ৫২ প্রজাতির পাখি থেকে ৭০৭১৬ নমুনা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। এই গবেষণাপত্রটি ইকোলজি লেটারস নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও টেকসিই স্কুলের সহকারী অধ্যাপক ব্রায়ান উইকসের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল বলছে, পাখির ডানার সঙ্গে দেহের ভারসাম্যহীনতার এমনই দৃষ্টান্ত দেখা গেছে শিকাগো শহরে, কয়েকটি পাখি ভবনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মারা পড়েছে। যার নমুনা তিনি সংগ্রহ করেছেন এবং একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন।
বিবিসি বলছে, এই অধ্যয়নটি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে প্রাণীরা কিভাবে মানিয়ে নেবে তা বোঝার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।
অধ্যাপক ব্রায়ান উইকস বলছেন, আমরা গবেষণা করে দেখতে পেয়েছি যে, প্রায় সব প্রজাতিই ছোট হয়ে আসছে। আমাদের গবেষণার সময় ব্যবহৃত প্রজাতিগুলো বৈচিত্র্যময় ছিলো। তবে সব প্রজাতির মধ্যেই একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি প্রাণীর প্রতিক্রিয়া বিষয়ক অধ্যয়নে প্রায়ই ভৌগোলিক পরিসরে পরিবর্তন, লাইফ ইভেন্টের সময় পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেয়। অভিবাসন এবং জন্মের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের রূপচর্চাবিদ্যা গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় দিক। গবেষণায় এটি একটি বড় অনুমান।
গবেষণা বলছে, ১৯৭৮ থেকে ২০১৬ সময়কালে পাখিদের নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, পাখির নীচের পায়ের হাড়ের দৈর্ঘ্য-দেহের আকারের দেহের আকারের একটি সাধারণ পরিমাপ ২.৪% সঙ্কুচিত করে। একই সময়ে ডানাগুলি ১.৩% প্রসারিত হয়েছে।
এতে প্রমাণ করে যে, উঞ্চতর তাপমাত্রা দেহের আকার হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে ডানা দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এক স্থান থেকে অন্যত্র ভ্রমণ করা পাখিদের ক্ষেত্রে এটি মূলত বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।
উইকস বলছিলেন যে, ছোট আকারের দেহের অর্থ হলো, পাখিরা দীর্ঘ যাত্রা পথে কম শক্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে। উঞ্চ তাপমাত্রায় পাখি ছোট হওয়ার কারণ বিজ্ঞানীরা ঠিক নিশ্চিত নন। তবে একটি তত্ত্ব আছে যে, শীতল পরিবেশে ছোট প্রাণীরা ভালো থাকে।
উইকস বলছেন, পাখিরা সাধারণত রাতে স্থানান্তরিত হয় এবং ভবনের কৃত্রিম আলোতে আকৃষ্ট হয়। এসময় ভবনের জানালার সঙ্গে মারাত্মক সংঘর্ষ হয়ে আহত হয় কিংবা মৃত্যুবরণ করে। প্রতিবছর ভবন সংঘর্ষে কয়েক মিলিয়ন পাখি মারা যায় বলে ধারণা করা হয়।
উইকিস বলছেন, তিনি যখন এই বিষয়ে কাজ শুরু করেন বিষয়টি এতো গুরুত্বপূর্ণ তা ভাবেননি। তিনি শুধু ভেবেছিলেন যে, এটি ভবিষ্যতে কাযকর হতে পারে।
গবেষণাটি প্রমাণ করে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রাণীগুলো ছোট হয়ে আসছে।
এর আগে ২০১৪ সালে গবেষকরা প্রমাণ করেন যে, উঞ্চ তাপমাত্রার কারণে আলপাইন ছাগলগুলি ছোট হতে দেখা গেছে।
আরেকটি সমীক্ষা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্যান্য কীটপতঙ্গও ছোট হয়ে এসেছে। এছাড়াও পৃথিবীর উঞ্চায়নের কারণেই পৃথিবী থেকে যুগে যুগে বিলুপ্ত হয়েছে অনেক মূল্যবান প্রাণী।