বিশ্বকাপ শুরু আগে থেকেই নানা নাটক পাকিস্তান ক্রিকেটে। টি২০ বিশ্বকাপ ভারতে পা রাখার ঘণ্টাখানেক আগেও অব্যাহত ছিল সে নাটক। তাতে আরো রসদ যোগায় ভারতের পৌঁছে আফ্রিদির আতিথেয়তা নিয়ে করা মন্তব্য। এর পরে বিশ্বকাপে জঘন্য পারফর্মেন্স, যার তীব্র সমালোচনা আর বিশ্লেষন চলছে পাকিস্তানে। আফ্রিদি-ওয়াকারের ক্ষমা চাওয়াতেও কাজ হচ্ছে না। তারওপরে বিশ্বকাপ পরবর্তী দলের গোপন রিপোর্ট প্রকাশে তৈরি হয়েছে নতুন সঙ্কটময় অবস্থা।
অধিনায়ক আফ্রিদি তো অবশ্যই, কেউ কেউ দাবি তুলেছেন কোচ ওয়াকার ইউনুস বোর্ড প্রেসিডেন্ট শাহরিয়ার খানের বরখাস্তের। সব মিলিয়ে চতুরমুখী বিতর্কে আবারও টালমাতাল পাকিস্তান ক্রিকেট।
বিশ্বকাপের পর ক্রমশই কোণঠাসা হচ্ছেন অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদি। কোচের পর তার বিরুদ্ধে এবার রিপোর্ট জমা দিয়েছেন দলের ম্যানেজার ইন্তিখাব আলম। রিপোর্টে আফ্রদি সম্পর্কে ইন্তিখাব আলম লিখেছেন, ‘শিক্ষা-দিক্ষা নেই। নির্বোধ। যোগ্যতাহীন নেতা’।
পাঁচ পাতার রিপোর্ট জমা দিয়েছেন ইন্তিখাব আলাম। সেখানেই মাঠে ও মাঠের বাইরে আফ্রিদির আচরণ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। পাশাপাশি, অকারণে কীভাবে বিতর্কে জড়িয়েছেন আফ্রিদি, সে কথার উল্লেখও রয়েছে রিপোর্টে।
ইন্তিখাব লিখেছেন, ‘অতিরিক্ত চাপে পড়ে যাওয়াটা পাকিস্তানের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু টোয়েন্টি ২০ বিশ্বকাপ, তাই আরও বেশি চাপে ছিল দল। আমাদের ব্যাটিং, বোলিং— দুটি বিভাগই জঘন্য। ফিল্ডিংও যা তা। রান বাঁচানোর পরিবর্তে, তারা আরও বেশি করে চার-ছয় দিয়েছে!। বোলারদের মধ্যে আমির ছাড়া আর কেউ নেই, যে কি না ম্যাচ জেতাতে পারে। পিঞ্চ হিটার বলতে আমরা যা বুঝি, সেরকমও কেউ নেই দলে। সব থেকে বড় ব্যাপার এই দলের অধিনায়ক আফ্রিদি, যে কি না ২০ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছে, সে মাঠের মধ্যে বা মাঠের বাইরে কোথাও কোনও ছাপ রাখতে পারেনি। নেতৃত্ব দেওয়ার কোনও গুণ তার নেই। কোনও কৌশল ঠিকঠাক করতে পারেনি।’
বিশ্বকাপ চলাকালীন পাকিস্তান দলক ঘিরে দুটি বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। ইন্তিখাব আলম লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের থেকে ভারতে বেশি ভালবাসা পাই, এ কথাটা বলে প্রথম বিতর্ক উসকে দিয়েছিল আফ্রিদি। দ্বিতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল উমর আকমল। তিন নম্বর জায়গাটা তাকে দেওয়া হচ্ছে না কেন? এটা নিয়ে ইমরান খানকে বলে, সে টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর চাপ বাড়াতে চেয়েছিল। অযথাই এই দুই বিতর্ক তৈরি করা হয়েছিল।’
ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে হারের পেছনে অনেকগুলো কারণ কাজ করেছে, সে কথাও রিপোর্টে লিখেছেন ইন্তিখাব। বলেছেন, ‘সেদিন বৃষ্টি বড় কারণ হয়ে উঠেছিল। তারওপর ইমরান খান এসে পেপ-টক দিয়েছিলেন। উনি এখনকার ক্রিকেট সম্পর্কে খুব একটা ওয়াকিবহাল নন। তাই তার পেপ টকও কাজে লাগেনি। শোয়েব মালিক যখন শুরুর দিকে বল করছিল, তখন ফিল্ডিং সাজানো ঠিক হয়নি। ব্যাটিং করার সময় হাফিজকে তিনে পাঠানো হয়নি। সব মিলিয়ে সেদিন অনেক কিছুই ঠিক হয়নি।’ দলের মধ্যে মন কষাকষি নিয়েও, রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন ইন্তিখাব।
দাবি উঠেছে কোচ ওয়াকার ইউনুস ও বোর্ড প্রেসিডেন্ট শাহরিয়ার খানকে বরখাস্তের। এ নিয়ে ওয়াকার কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও শাহরিয়ার খান জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না।
তবে বোর্ডের প্রতি ক্ষেপে আছেন কোচ ওয়াকার। তার বিশ্বকাপ নিয়ে বোর্ডের কাছে দেওয়া তার গোপন রিপোর্ট অনৈতিকভাবে ২২ ঘন্টার মধ্যে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়েছে। তাই ওয়াকার বলেছেন, পিসিবিতে যতো রাজনীতি হয়, সেটা পার্লামেন্টেও হয় না।
আর দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে মুখ খুলেছেন সাবেক অধিনায়ক ও পেস কিং ওয়াসিম আকরাম। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পাকিস্তান ক্রিকেট পুরোপুরি ধ্বংস হবে বলেও হুশিয়ার করেছেন তিনি। ওয়াকারের রিপোর্ট প্রকাশ নিয়ে আকরাম বলেছেন, শীর্ষ পর্যায়ের লোকজনের মানসিকতা যদি এই হয়, তাহলে খেলোয়াড়দের অবস্থা কি হবে।
ক্ষেপেছেন সাবেক বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খানও। পিসিবিতে রাজনৈতিক প্রভাবের কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দলের সবাইকে বের করে দিয়ে নওয়াজ শরীফ (প্রধানমন্ত্রী) ও নজম শেঠীকে (সাবেক বোর্ড প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পিএসএল চেয়ারম্যান) ওপেনিং করতে পাঠানো হোক।’
এদিকে, পাক বোর্ডের ফ্যাক্ট–ফাইন্ডিং কমিটি শুক্রবারই পরিষ্কার জানিয়েছে, অবিলম্বে বরখাস্ত করা হোক কোচ ওয়াকার ইউনিস এবং টোয়েন্টি ২০ দলের অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদিকে।
নতুন কোচের দৌড়ে এগিয়ে গেছেন সাবেক টেস্ট ওপেনার মহসিন খান, যিনি এর আগেও পাক জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। চলতি সপ্তাহেই তিনি কোচের দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে দেখা করেছিলেন বোর্ড চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খানের সঙ্গে।
তবে পাক বোর্ড সূত্রের খবর, মহসিন কোচ নয়, তিনি ফের মুখ্য নির্বাচকই করা হতে পারে তাকে। কারণ কোচের দাবিদার আছেন আরও অনেকে, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মইন খান, আকিব জাভেদ।