চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

পাকিস্তানে শিশুর যৌন নিপীড়ককে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়ার প্রস্তাব পাস

শিশু হত্যাকারী ও যৌন নিপীড়নকারীকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়ার একটি প্রস্তাব পাস করেছে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একের পর এক বেশ কয়েকটি বড় ধরনের শিশু হত্যা ও যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণ মামলার ফলে দেশটিতে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনায় শুক্রবার এই লিখিত প্রস্তাবটি গৃহীত হলো।

পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী আলী মুহাম্মাদ খান শুক্রবারের অধিবেশনে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন: ‘শিশুদের খুনি এবং ধর্ষকদেরকে শুধু ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত নয়, ফাঁসিটা হওয়া উচিত জনসমক্ষে।’

‘কোরআনে নির্দেশ দেয়া আছে, হত্যাকারীকে ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে,’ বলেন তিনি।

বেশিরভাগ মন্ত্রী প্রস্তাবটিতে সায় দিলেও মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী শিরীন মাজারি এর বিপক্ষে মত দেন। তিনি বলেন: এই শাস্তি প্রক্রিয়ায় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নেই।

এক টুইটবার্তায় মাজারি বলেন: ‘প্রকাশ্যে ফাঁসি দলীয় সীমার অধীনে নয় এবং এটি সরকার সমর্থিত কোনো প্রক্রিয়াও নয়। এটি একটি বিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। আমাদের অনেকেই এর বিরোধিতা করছি – আমাদের মানবাধিকার মন্ত্রণালয় এর বিরোধিতা করছে।’

বহু বছর ধরেই পাকিস্তানের মানবাধিকার সংস্থাগুলো মৃত্যুদণ্ডের ওপর পুনরায় স্থগিতাদেশ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল। ২০১৪ সালে পেশোয়ারে আর্মি পাবলিক স্কুল হত্যাকাণ্ডের আগ পর্যন্ত দেশটিতে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দান স্থগিত ছিল। ২০১৪ সালের ওই ঘটনায় ১৫১ জন নিহত হওয়ার পর স্থগিতাদেশ তুলে দেয়া হয়। নিহতদের বেশিরভাগই ছিল শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি শিশু ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে পাকিস্তানে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে লাহোরের কাছে অবস্থিত কাসুর এলাকা জয়নব ফাতিমা আমিন নামে ছয় বছর বয়সী একটি শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার ভয়াবহ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে দেশ জুড়ে।

শিশুটির ২৪ বছর বয়সী ধর্ষক ইমরান আলী গ্রেপ্তার হওয়ার পর ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করলে ওই বছর অক্টোবরে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

এর আগে ২০১৫ সালে ওই কাসুরেরই স্থানীয় প্রশাসন শিশু যৌন নির্যাতনের এক বিশাল চক্র সম্পর্কে তথ্য বের করতে সফল হয়। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় একটি গ্যাংয়ের মাধ্যমে ২৮০টি শিশুকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ পায়, যারা ওই শিশুদের পরিবারকে নিপীড়নের ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল।

বর্তমানে পাকিস্তানে কোনো অপরাধেই প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিধান নেই।

তবে নতুন এই প্রস্তাবের পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাউথ এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ওমর ওয়ারাইখ মেইল অনলাইনকে এক বিবৃতিতে বলেন: পাকিস্তানের এই নিষ্ঠুর প্রাচীন শাস্তির (ফাঁসি) প্রচলন বিলুপ্ত করা উচিত, এর ব্যবহার আরও সম্প্রসারিত করা উচিত নয়।