লাখো পাশতুন বিক্ষোভকারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের অভিযোগ এনে এসব বন্ধের আন্দোলন করছে পাকিস্তানে। আর শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে এ আন্দোলনে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন মনজুর পাশতিন নামের এক যুবক।
পাশতুন নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য মনজুরের বয়স ত্রিশের কোঠায়। মুখভর্তি চাপদাঁড়ি আর দৃঢ় মুখভঙ্গির এই মানুষটিকে সামনে রেখে জনগোষ্ঠীটির আন্দোলন সময়ের সাথে আরও বড় আকার ধারণ করছে।
মনজুর পাশতিন সাধারণত নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা পশতু’তে কথা বলেন। কিন্তু অন্যান্য পশতুন তরুণ ও যুবকদের মতো তিনি অন্য ভাষায় অক্ষম নন। প্রয়োজনে স্পষ্ট ও সাবলীলভাবে উর্দু এবং ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন তিনি।
বিবিসি’কে গত মার্চে মনজুর বলেন, তিনি কখনো ভাবেননি এমন জনসমর্থন পাবেন। তবে কী কী পরিবর্তন প্রয়োজন, এ ব্যাপারে আগে থেকেই তিনি নিশ্চিত ছিলেন।
‘জনগণ ছিল নিষ্পেষিত। তাদের জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। একদিকে কারফিউ আর অন্যদিকে সেনা সদস্যদের কাছে অপমানিত হওয়া – তাদের কাছ থেকে তাদের আত্মাভিমান ছিনিয়ে নিয়েছিল।’
তাই গত ফেব্রুয়ারি থেকেই মনজুর ও তার সমর্থকরা কোয়েটা থেকে শুরু করে পেশাওয়ার পর্যন্ত পশতুন অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ঘুরতে থাকেন। তাদের জমে অল্প সময়েই ভিড় বাড়তে থাকে নির্যাতিত পাশতুনদের। একের পর এক উঠে আসতে থাকে তাদের কখনো শেষ না হওয়া দুর্দশা, মৃত্যু আর ধ্বংসের গল্প।
এভাবেই অল্প সময়ের মধ্যে বিশাল সমর্থন পেয়ে যান মনজুর।
আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে এই আন্দোলন পাকিস্তানের দোদুল্যমান ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মনজুর পাশতিন এমন একটি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছেন যাদের দাবি, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘ যুদ্ধে তারা দিনের পর দিন নির্যাতন ও বর্বরতার শিকার হয়েছে।
এমনকি পাকিস্তানের বালুচিস্তান এবং ‘ফেডারেলি অ্যাডমিনিস্টার্ড ট্রাইবাল এরিয়াস’ বা ‘ফাটা’সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো পাশতুন নিখোঁজ হয়েছে বলেও জানিয়েছে সেসব এলাকায় কাজ করা এনজিওগুলো।
কর্তৃপক্ষের বয়কট করার আহ্বান অগ্রাহ্য করে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে লাহোরে কয়েক হাজার মানুষ সেনাবাহিনীর নির্যাতনের প্রতিবাদে র্যালি করেছিল। অভিযান চালিয়ে আন্দোলনের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলেও থামেনি র্যালি।
‘পাশতুন তাহাফ্ফুজ মুভমেন্ট’ (পিটিএম) বা পাশতুন সুরক্ষা আন্দোলন দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ একটি কর্মসূচি। এর দাবিদাওয়াগুলোও পাকিস্তানি আইনের অধীনেই বাস্তবায়নযোগ্য।
তবে পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই কর্মসূচি দেশের নেতাদের অনেক বড় একটা চাপে ফেলে দিয়েছে। কেননা এটি সরাসরি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে।
এই চাপের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে নেতাদের আচরণে।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়াও আন্দোলনের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, এই প্রতিবাদ কর্মসূচি ‘সাজানো’। অর্থাৎ এটি একটি শত্রুতামূলক বিদেশি এজেন্ডার ফল। যদিও আন্দোলনকারীদের আচরণ সাজানো বা পূর্বপরিকল্পিত নয়, স্বতঃস্ফূর্ত।
সরকারের পক্ষ থেকে পাশতুনদের এই আন্দোলনকে জনবিচ্ছিন্ন করার নানারকম চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। পিটিএম র্যালিগুলোর প্রায় সব ধরনের মিডিয়া কাভারেজ বন্ধ রয়েছে। যেন সেই কাভারেজ দেখে কেউ তাদের সমর্থনে আগ্রহী না হয়।
অথচ সেই তুলনায় পাকিস্তানি গণমাধ্যমগুলোতে পিটিএমবিরোধী ছোট ছোট কর্মসূচিগুলো বেশ ভালো কাভারেজ পাচ্ছে। এই কর্মসূচিগুলো জনসংযোগ তেমন পায়নি বলে সেসব কাভারেজে দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের সন্দেহ, এই কর্মসূচিগুলোতে সেনাবাহিনীর মদদ রয়েছে।