প্রয়াত কিংবদন্তী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকেরের জন্ম ১৯৪৪ সালে। বয়সে তাঁর বছর ছয়েক ছোট হলেও নাট্য ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফের সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো বন্ধুর মতোন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুজনই যুদ্ধ করেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের সাংস্কৃতিক মান উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তাঁরা। পাঁচ দশক ধরে তাঁদের সম্পর্ক, বন্ধুত্ব।
আলী যাকেরের প্রয়াণের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সেই সম্পর্কেরও যেন বিচ্ছেদ হলো। এমন বেদনাই ঝরে পড়লো নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর কণ্ঠে।
আলী যাকেরকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সামনে সমবেত হয়েছিলেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আলী যাকেরকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ।
বলেন, পাঁচ দশকের বন্ধুত্ব, সম্পর্ক যাকের ভাইয়ের সাথে। নাটকের অভিজ্ঞতা, একসাথে দেশের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। আবার সেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগুলোকে বাস্তবায়ন করা, সবই একসাথে মিলে করেছি। মঞ্চে যেরকম দুর্দান্ত সাহসী অভিনেতা ছিলেন, রাস্তায়ও তেমন, মানুষ হিসেবেও ছিলেন সাহসী। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাহসী।
তিনি বলেন, তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলো তো মাইলস্টোন একেকটা। আমাদের গ্যালিলিওর মতো আরেকটি সৃষ্টি খুব কঠিন। এগুলো নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করা যায়, কিন্তু এরকম আর ঘটবে না! তিনি নির্দেশক হিসেবেও ছিলেন অত্যন্ত কৌশলী।
‘সফল মানুষ ছিলেন আলী ভাই, অভিনেতা হিসেবেও সফল। তার স্ত্রী স্বনামধন্য অভিনত্রী, তাঁর কন্যা এবং পুত্র নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল। এরকম সফল একজন মানুষের করোনায় চলে যাওয়াটা খুবই দুঃখের, কষ্টের।’- বললেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ।
শুক্রবার ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আলী যাকের। বার্ধক্য ও হার্টের সমস্যাসহ বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা নিয়ে গত ১৭ নভেম্বর ঢাকার শ্যামলীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। মৃত্যুর দুদিন আগে তাঁর করোনা পজিটিভ আসে।
চার বছর ধরে ক্যানসারে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেও সর্বশেষ ২০১৯ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়-এর ৪৬তম প্রযোজনা ‘গ্যালিলিও’তে অভিনয় করেন তিনি।