চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

পাঁচ দশকের পাঁচ নায়িকা, নায়ক দাপট এড়িয়ে…

বিশ্ব নারী দিবস

পুরুষ শাসিত সমাজের প্রায় প্রতিটি পেশাতেও পুরুষই সর্বেসর্বা! বাংলাদেশও নয় তার ব্যতিক্রম। কাজে কর্মে পুরুষই শ্রেষ্ঠ! এটা যেনো অঘোষিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে সমাজে। অন্যান্য পেশার মতো চলচ্চিত্রেও এই হাল। অভিনয়, নির্মাণ সব জায়গাতেই এককভাবে পুরুষেরই আধিপত্ব। তাদেরই যেনো রাজত্ব! কিন্তু এসবের মধ্যে থেকেও নিজ গুণে, শ্রমে, মেধা, দক্ষতায় কেউ কেউ সমাজে প্রতিষ্ঠিত এরকম অচলায়তন ভাঙেন। […]

পুরুষ শাসিত সমাজের প্রায় প্রতিটি পেশাতেও পুরুষই সর্বেসর্বা! বাংলাদেশও নয় তার ব্যতিক্রম। কাজে কর্মে পুরুষই শ্রেষ্ঠ! এটা যেনো অঘোষিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে সমাজে। অন্যান্য পেশার মতো চলচ্চিত্রেও এই হাল। অভিনয়, নির্মাণ সব জায়গাতেই এককভাবে পুরুষেরই আধিপত্ব। তাদেরই যেনো রাজত্ব! কিন্তু এসবের মধ্যে থেকেও নিজ গুণে, শ্রমে, মেধা, দক্ষতায় কেউ কেউ সমাজে প্রতিষ্ঠিত এরকম অচলায়তন ভাঙেন। ছাড়িয়ে যান সমস্ত শাসন বারণ। স্বকীয় অবস্থান তৈরি করেছেন চলচ্চিত্রে। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চিত্রনায়িকা কবরী, শাবানা, ববিতা, মৌসুমী এবং শাবনূর। নায়ক নির্ভর ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের গ্রহণযোগ্যতা ছিলো নায়ক সম। ষাটের দশক থেকে গেল দশক পর্যন্ত তাদের অভিনীত ছবি দেখতেও প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমাতো হাজারো মানুষ। বাংলা চলচ্চিত্র যতোদিন টিকে থাকবে এই নায়িকারাও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মনে করছেন অনেকেই। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকাই চলচ্চিত্রে এরকম পাঁচ দাপুটে অভিনেত্রীর কথা থাকলো এখানে:

কবরী:
বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা কবরী। সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে তার যাত্রা। ১৯৬৪ সালে মুক্তি পাওয়া নিজের প্রথম ছবি দিয়েই রীতিমত তারকায় পরিনত হন এই নায়িকা। অভিনয় দক্ষতায় রাতারাতি ইন্ডাস্ট্রিতে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। এরপর দাপটের সঙ্গেই অভিনয় করেন চলচ্চিত্রে। একে একে অভিনয় করেন আবির্ভাব, দীপ নেভে যাই, দর্প চূর্ণ, বিনিময়, রংবাজ, সুজন সখী, তিতাস একটি নদীর নাম, সারেং বৌ-এর মতো তুমুল জনপ্রিয় ছবিগুলোতে। নায়িকা হিসেবে আশির দশক পর্যন্ত ছিলো তার এই দাপট। ঢাকাই চলচ্চিত্রের অতীত ইতিহাস থেকে জানা যায়, শুধুমাত্র কবরীকে দেখতেও অসংখ্য মানুষ ভিড় করতো দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে।

শাবানা:
নায়িকা হিসেবে ষাটের শেষ দিকে আত্মপ্রকাশ করলেও শিশু অভিনেত্রী হিসেবে ষাটের শুরুতেই অভিনয় জগতে পা ফেলেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা। বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে তিনি রিয়েলেস্টিক অভিনয় দিয়ে ঘোরে ফেলে দেন। সত্তুরের শুরু থেকেই প্রেক্ষাগৃহে তার নামে বাড়তে থাকে অগনিত দর্শক ভক্ত! শাবানার অভিনয় মানে সেই ছবিতে নায়ক কে, সেটা মুখ্য হয়ে উঠেনি কখনো। নায়ক নির্ভর ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে এমন দৃশ্য বিরল! প্রায় তিনশো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শাবানা। জননী, দোস্তদুষমন, দুই পয়সার আলতা, ভাত দে, হিম্মতওয়ালী,রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত,গরীবের বউ, রাঙা ভাবী, কালিয়ার মতো ছবিতে দুর্দান্ত দাপুটে সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।ববিতা:
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ববিতা। ষাটের দশকে শিশু শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে তার পদার্পন। বড়বোন সুচন্দার হাত ধরেই তিনি নাম লেখান চলচ্চিত্রে। নন্দিত নির্মাতা জহির রায়হানের ‘সংসার’ নামের ছবিতে। ১৯৬৮ সালে। প্রথম অভিনীত ছবিতে তিনি রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। অথচ এই ববিতাই পরের দশকেই নায়করাজের সঙ্গে ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অরুণোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী, ইয়ে করে বিয়ে, অশনি সংকেত, আবার তোরা মানুষ হ, নয়নমনি, গোলাপী এখন ট্রেনে, দহন নামগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নব্বই দশক পর্যন্ত চলচ্চিত্রে নিজের দাপট ধরে রাখেন এই অভিনেত্রী।

মৌসুমী:
কবরী, শাবানা কিংবা ববিতা যুগের যেখানে শেষ, ঠিক সেখান থেকেই মৌসুমী, শাবনূরদের মতো চিত্রনায়িকাদের শুরু। নব্বইয়ের শুরুতেই ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়েই আলোড়ন ফেলে দেন নতুন একটি মুখ। নাম মৌসুমী। সেই শুরু। এরপর শুধু পূর্বসুরী নায়িকাদের পথ অনুসরণ করে সামনে এগুনোর পালা। নায়িকা হিসেবে পুরো নব্বইয়ের দশক মাতিয়ে রাখেন মৌসুমী। কখনো কখনো অভিনয় নায়কদেরকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন স্নেহ, দেনমোহর, অন্তরে অন্তরে, বিদ্রোহী বধু, গরীবের রানী, আম্মাজান, মোল্লা বাড়ির বউ, মাতৃত্ব’র মতো ছবিগুলোতে। এমনকি এখনো তিনি বাংলা চলচ্চিত্র মাতিয়ে চলেছেন নিয়মিত। সঙ্গের অনেকেই অভিনয়ের মূল স্রোত থেকে ছিটকে পড়লেও মৌসুমী এখনো দাপট নিয়ে অভিনয় করে যাচ্ছেন চলচ্চিত্র।

শাবনূর:
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তুমুল দর্শকপ্রিয় একটি নাম শাবনূর। তার মধ্যে পূর্ববর্তী নায়িকা শাবানার ছাপ রয়েছে বলেই মনে করতেন অনেকে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি দর্শকের কাছে তাই শাবনূরের রয়েছে আলাদা মূল্যায়ণ। বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকের কাছে দাপুটে এই অভিনেত্রীর যাত্রা শুরু নব্বইয়ের শুরুতে। এহতেশামের ‘চাঁদনী রাতে’র মত ফ্লপ ছবি দিয়ে অভিনয়ে নাম লেখালেও বছর দুয়েকের মধ্যেই শক্তিশালী অভিনয় সত্তার জানান দেন তিনি। পুরো নব্বই দশকজুড়ে একাই যেন দাপিয়ে বেড়ান এই নায়িকা। শাবনূর অভিনীত এককভাবে লাগাতার ‘সুপার হিট’ হওয়া ছবির তালিকায়ও আছেন তিনি। শুধু তাই নয়, মনে করা হয় শাবনূর অভিনীত এককভাবে যে ছবিগুলা ব্যবসা করেছে তা তার সমকালীন কোনো তারকা নায়কের ক্ষেত্রেও নেই। বেশ কয়েক বছর ধরে অভিনয়ে না থাকলেও তার নামে এখনো চলচ্চিত্র প্রেমীরা আলাদা সম্মান দেখান।